Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভাইরাস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে বনভ্রমণ: জাপানী গবেষণায় বিস্ময়কর ফল


আগামী নিউজ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২০, ০৬:৪৮ পিএম
ভাইরাস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে বনভ্রমণ: জাপানী গবেষণায় বিস্ময়কর ফল

ডা. এজাজ বারী চৌধুরী (ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, সিটি হাসপাতাল লিমিটেড, লালমাটিয়া):

॥ ১ ॥
তেরো বছর আগের কথা৷ জাপানের একদল গবেষক ল্যাবরেটরীতে এক বিস্ময়কর রহস্য আবিস্কার করলেন৷ বিষয়টিতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে আশার আলো ছিলো৷ জাপানের নিপ্পন মেডিক্যাল স্কূল, ওসাকা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন এবং আরো দুটি জাপানী বন গবেষণা কেন্দ্র সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এলো বিষয়টি নিয়ে বাস্তব experiment করার জন্য৷

॥ ২ ॥

এক্সপেরিমেন্টের তিন দিন আগে অংশগ্রহনকারীদের রক্ত পরীক্ষা করা হলো৷ তাদের বয়স ছিলো ৩৭ থেকে ৫৫ এর মধ্যে৷ এক্সপেরিমেন্টের দিন তাদেরকে তিনটি দলে ভাগ করে পাঠানো হলো, টোকিও শহর থেকে দূরের তিনটি বনে৷ সেখানে তারা থেকেছিলেন তিন দিন এবং দুই রাত৷

প্রথমদিন বিকেলে তাদেরকে দুই ঘন্টা বনে হাঁটানো হলো৷ দ্বিতীয় দিন সকালে তাদের রক্ত পরীক্ষার জন্য নেয়া হলো৷ তারপর সেদিন সকালে দুই ঘন্টা এবং বিকেলে দুই ঘন্টা তাদেরকে দুটো আলাদা বনে হাঁটানো হলো৷ তৃতীয়দিন সকাল আটটায় তাদের রক্ত নিয়েই এক্সপেরিমেন্ট শেষ করা হলো৷

রক্ত পরীক্ষার ফলাফল এলো খুবই উৎসাহব্যন্জক৷ এক্সপেরিমেন্ট চলাকালীন প্রথম রক্ত পরীক্ষায় NK cells এর পরিমান উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে এবং দ্বিতীয় দিনের রক্ত পরীক্ষায় NK cells বেড়েছে প্রায় দেড়গুন (৫০%)৷ এছাড়া গ্রানুলাইসিন, পারফোরিন, গ্রানজাঈম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে যেগুলো NK cells এবং Cytotoxic T Cells নিঃসরণ করে৷

॥ ৩ ॥

পরীক্ষাগারে গবেষকরা আবিস্কার করেছিলেন, গাছ থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন রকম গন্ধ বা Phytoncides মানুষের NK cells এর পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় এবং গ্রানুলাইসিন, পারফোরিন, গ্রানজাঈম নিঃসরণও বাড়ায় যেগুলো ক্যান্সার কোষ, ভাইরাস এবং ব্যাক্টিরিয়াকে মারতে অনন্য ভূমিকা রাখে৷

বনের বাতাসেও তারা প্রচুর পরিমানে ফাইটোনসাইডস পেয়েছিলেন যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো আলফা পাইনিন, বিটা পাইনিন এবং আইসোপ্রেন৷ সুতরাং গবেষকরা বুঝলেন, তাদের ল্যাবরেটরীর আবিস্কার বাস্তবেও মিলে যায়৷ বনে সকালে বিকেলে দুঘন্টা হাঁটার এই নিয়মটাকে তারা নাম দিলেন, “Forest Bath.”

॥ ৪ ॥

গবেষকদের মন তবুও খুঁতখুঁত করতে থাকলো৷ তাঁরা ভাবলেন, অন্য কোন কারনও তো এর পেছনে থাকতে পারে৷ এজন্য তারা দ্বিতীয় এক্সপেরিমেন্ট করলেন৷

এবার দুটো দলকে নেয়া হলো৷ একদলকে পাঠানো হলো বনে আর আরেক দলকে টোকিও শহর থেকে দূরের আরেক শহরে যেখানে বন নেই৷ পুরো এক্সপেরিমেন্ট একই নিয়মেই করা হলো শুধু রক্ত পরীক্ষার সাথে যোগ হলো প্রস্রাব পরীক্ষা৷

পরীক্ষার ফলাফলে পাওয়া গেলো, শহরে পাঠানো দলটির রক্তে এবং প্রস্রাবে কোনই পরিবর্তন নেই৷ কিন্তু বনে পাঠানো দলটির রক্ত পরীক্ষার ফলাফল আগের মতোই৷ বরং আরেকটি নতুন জিনিষ ধরা পড়লো৷ বনে পাঠানো দলটির প্রস্রাবে এড্রেনালিনের পরিমান উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে৷

এড্রেনালিন আমাদের মানসিক চাপ বাড়ায় এবং NK cells কে ঠিকমতো কাজ করতে দেয়না৷ সুতরাং নতুন ধারণা পেলেন গবেষকরাঃ Forest Bath প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়৷

আরেকটি দুঃখজনক জিনিষও বের হয়ে আসলো৷ শহরের বাতাসে কোন ধরণের Phytoncides এর অস্তিত্ব পাওয়া গেলোনা৷

॥ ৫ ॥

গবেষকদের মনে এরপর নতুন চিন্তা এলো৷ Forest Bath এ তৈরী হওয়া অতিরিক্ত NK cells এবং কেমিক্যালগুলো মানুষের শরীরে কতোদিন পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকে? এজন্য তারা এক্সপেরিমেন্টের ৭ম দিন এবং ৩০ তম দিনে আবার রক্ত পরীক্ষা করলেন৷

রিপোর্টে আসলো, ৭ম দিন পর্যন্ত NK cells এর পরিমান এবং বিধ্বংসী ক্ষমতা প্রায় একই থাকে! ৩০ তম দিনে সেটা কমে গেলেও এক্সপেরিমেন্টের আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেশী থাকে৷

॥ ৬ ॥

এরপর গবেষকরা ভাবলেন, এই ফাইটোনসাইডস যদি ঘরের ভেতর ছড়িয়ে দিয়ে সেই ঘরে থাকা যায়, তাহলে রেজাল্ট কি আসবে??

শুরু হলো তৃতীয় এক্সপেরিমেন্ট৷ এতে অংশগ্রহন করলো, মেডিক্যালের ছাত্ররা৷ তারা সারাদিন তাদের রেগুলার রুটিন মাফিক চলবে, শুধুমাত্র তিন রাত তারা সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত হোটেল রুমে থাকবে৷ হোটেলের কক্ষে ফাইটোনসাইডস তৈরী করা হয়েছিলো হিনোকি সাইপ্রেস স্টেম অয়েল কে বাস্পীভূত করে৷ এবার রক্ত পরীক্ষা হলো শুধু শেষ দিন কিন্তু প্রস্রাব প্রতিদিনই৷

ফলাফল আসলো, NK cells এবং গ্রানুলাইসিন, পারফোরিন, গ্রানজাঈম তৈরী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে অংশগ্রহনকারীদের৷ কিন্তু প্রস্রাবে কোন পরিবর্তন ধরা পড়লোনা৷

এই এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে গবেষকরা নিশ্চিন্ত হলেন, গাছের ফাইটোনসাইডস আমাদের শরীরের NK cells এর পরিমান এবং কার্যকারিতা বাড়ায়৷ আর বন জঙ্গলের বাতাসে মিশে থাকা ফাইটোনসাইডস এর কারনেই বনে ঘুরতে যাওয়া মানুষদের শরীরেও একই সুফল আসে৷

॥ ৭ ॥

তেরো বছর আগের এই সিরিজ এক্সপেরিমেন্টের কথা এখন কেন উঠে আসছে?

প্রথমতঃ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়ো যুদ্ধাস্ত্র নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই৷ তাও আবার কেবল Innate Immunity যেটা কিনা আমাদের অধিকাংশেরই দুর্বল৷ (আমার আগের লেখা হাইড্রোথেরাপীতে বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি)৷ সুতরাং Innate Immunity কে শক্তিশালী করার সমস্ত উপায় নিয়েই মানুষ নতুন করে ভাবছে৷

দ্বিতীয়তঃ Forest Bath এর কার্যকারীতা ৭ দিন পর্যন্ত একই রকম থাকে এবং ৩০ দিন পর্যন্ত মোটামুটি থাকে৷ Lock down এবং Social distancing এর এই দুঃসময়ে এটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি কিনা সেটাও আলোচনায় আসছে৷

তৃতীয়তঃ জাপানের মতো পরিবেশ সচেতন দেশের শহরের বাতাসেও সেই ২০০৭ সালেই কোন ফাইটোনসাইডস খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ আর এখনকার শহরগুলোর অবস্থা নিজেই চিন্তা করুন৷ পৃথিবীর ব্যস্ত শহরগুলোতে করোনা ভাইরাসে মানুষের অত্যধিক আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হারের সাথে এর সামান্য হলেও সম্পর্ক আছে কিনা সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখন ভাবতে বসেছেন৷

সুত্র: নিরাময় ২৪ .কম

আগামী নিউজ/ তাওসিফ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে