Dr. Neem on Daraz
Victory Day

অর্থ কষ্টে থমকে গেছে শিল্পীরা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০, ১২:৫০ পিএম
অর্থ কষ্টে থমকে গেছে শিল্পীরা

ফাইল ছবি

বরিশালঃ রূপসী বাংলার কবি, নির্জনতার কবি জীবনানন্দ দাশের শহর বরিশাল। গত ৭ মাস ধরে এই শিল্পের শহরে এখন কোনো কবিতার মায়াময় ধ্বনি নেই, মঞ্চে নাটকের দৃশ্য নেই, প্রাণের স্পন্দন সবই যেন। মঞ্চ নাটক, সঙ্গীত, নৃত্যসহ ললিতকলার সব শাখা যেন করোনায় থাবায় ম্লান। নেই কোনো জীবননান্দ! সবই স্থিমিত হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে নাজুক অবস্থায় পড়ে গেছে শিল্পী-কলাকুশলীদের জীবন। তবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও যারা সংস্কৃতিকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাদের জীবনের চাকা অর্থনৈতিক কষ্টের কামড়ে থমকে যাচ্ছে বারবার! সংস্কৃতি জগতের এসব বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতিসেবীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশালে সাংস্কৃতিক কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজারের মতো। সারা বরিশাল বিভাগে ছড়িয়ে আছে শতাধিক সংগঠন। এদের মধ্যে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমম্বয় পরিষদ জোটভুক্ত সংগঠনের সংখ্যা মাত্র ২৭টি। বাকিরা যে যার মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। জানতে চাইলে, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ ভোরের কাগজকে বলেন, করোনায় বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গন পুরোপুরি স্থিমিত হয়ে আছে। এর মধ্যে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জয়ন্তী করেছি ঘরোয়াভাবে। পাশাপাশি যারা সংস্কৃতিকে পেশা হিসেবে নিয়ে করোনা ঝড়ের তাণ্ডবে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। তাদের সহায়তা দিয়েছি। যদিও তা পর্যাপ্ত নয়।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সহসভাপতি মিন্টু কুমার কর বলেন, বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও বাউল শিল্পী, তবলচি, শিক্ষক, গিটারিস্ট, ব্যান্ড শিল্পীসহ যারা সংস্কৃতিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা তাদের পাশে সীমিতভাবে দাঁড়ালেও তা সিন্ধু জলে বিন্দুর মতোই।

বরিশালের ছোটকাগজ ‘জীবনানন্দ’ সম্পাদক ও বিশিষ্ট কবি হেনরী স্বপন বলেন, বরিশাল তো শিল্পের শহর। সারাক্ষণ মুখর থাকে নানা আয়োজনে। অথচ করোনা এই শহরের চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। কীর্তনখোলা গ্রুপ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন বিশ্বাস টুটুল বলেন, করোনার ধাক্কায় বরিশালের দুঃস্থ শিল্পীরা আরো দুঃস্থ হয়ে গেছে। আমরা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে তাদের জীবন চলছে না। সরকারকেই পাশে থাকতে হবে। ৭ মাসে ৫০০০ হাজার টাকার প্রণোদনায় কি হবে?

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, এ বছর পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে নানা মেলা চলে গেল উৎসবহীন। যেসব আয়োজনে পেশাদার শিল্পীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে অনেক আয় করতেন। এবার করোনায় সবই ভেস্তে গেছে। শিল্পীদের নাভিশ^াস উঠেছে! বরিশাল উদীচীর সভাপতি সাইফুর রহমান মিলন বললেন, আমরা শিল্প-সংস্কৃতি করছি প্রাণের টানে। কিন্তু যারা এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবনযাপন করছেন তাদের জীবন হুমকীর মুখে। তারা অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিল্পীরা তো লজ্জায় কারো কাছে বলতেও পারছে না। সরকার যে সহায়তা দিয়ে তাও অপ্রতুল। ৫০০ জনের তালিকা থেকে মাত্র দেয়া হয়েছে ৯০জনকে। বাকিরা কোথায় যাবে?

বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা হাসানুর রশিদ মাকসুদ বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বরিশালে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া ৯০ জন অসহায় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাঝে ৫ হাজার টাকার করে মোট ২ লাখ টাকার অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ২০০ জনকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। তবে আবেদন করেছিলেন ৫০০ জন শিল্পী।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে