Dr. Neem on Daraz
Victory Day

এখন শরৎকাল তাই ফুটেছে শাপলা


আগামী নিউজ | জেহিন আহমেদ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০, ১২:০১ এএম
এখন শরৎকাল তাই ফুটেছে শাপলা

ছবি; সংগৃহীত

ঢাকাঃ ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে/এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ কিরণ রথে/ দলি শাপলা শালুক শত দল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল/ নীল লাল ঝড়ায়ে ঢল ঢল এসো অরণ্য পর্বতে’ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের এমন কথামালা শরতের সৌন্দর্য্যরে এক মূর্তমান বহিঃপ্রকাশ।

শরৎ এলেই প্রকৃতি হেসে ওঠে প্রাণের সজীবতায়। রঙ, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়েই হাজির হয় ঋতুরানী শরৎ। নিচে বিস্তীর্ণ সবুজ আর ওপরে বিশাল নীলাকাশ। ঝকঝকে নীল আকাশের বুকে ধবধবে সাদা মেঘের ভেলা। মনে হয় শ্বেত বসনা এক ঝাঁক তরুণী যেন নৃত্য করছে। নানাবিধ ফুলের শোভা আর শস্যের শ্যামলতা।

ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস মিলে শরৎ ঋতু। শরৎ মানেই নদীর তীরে কাশফুল, গাছে গাছে শিউলি, বেলি, জুঁই, শেফালি, মালতি, টগর, হাসনাহেনা আর বিলে-ঝিলে শাপলা ফুলের সমারোহ আর লম্বা লম্বা তালগাছে পাকা তালের মিষ্টি ঘ্র্রাণ। 

শরতে ফুটেছে লাল শাপলা ফুল। ভাসমান লাল সাদা চারদিকে পাতা বিছিয়ে লাল শাপলা ফুলটি ফুটিয়ে মেলে ধরছে তার নিজস্ব সৌন্দর্য।  লাল সাদা শাপলা ফুল ভ্রমণ পিপাসু পর্যটককে তার সৌন্দর্য মেলে ধরছে।  

শাপলা ফুলের চারদিকে ভাসমান পাতা লতার মত বাতাসের সঙ্গে দুলছে। দূর থেকে মনে হয় যেন ছোট ছোট নৌকা দুলছে। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে গেলে পড়ন্ত বিকেলে আরও বেশি শাপলা ফুলের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। 

শাপলার ইতিহাসঃ

এই উদ্ভিদ প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে এইফুল পুকুর ও বাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার প্রভৃতি দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। এই ফুল পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও দেখা যায়। এই ফুল যেমন দেখা যায় চাষে রজমিতে, তেমনই হয় বন্য এলাকায়। কাটা ধান ক্ষেতের জমে থাকা অল্প পানিতে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। বিশ্বে এই উদ্ভিদের প্রায় ৩৫টি প্রজাতি পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে শাপলার নামকরণঃ

বাংলায় বলা হয় শাপলা। ইংরেজিতে শাপলাকে বলা হয় “Water Lily”, White Water Lily, White Lotus.অন্যান্য ভাষায়: থারো আংগৌবা (মনিপুরী), ভেলাম্বাল (তামিল), কুমুদ (সংস্কৃত), শালুক (বাংলা), নিরাম্বল (মালয়ালম ভাষা), কান্নাইদিলি (কান্নাদা), নাল (আসামি ভাষা)। বাংলায় নীল শাপলা ফুলকে শালুক বা নীল কমল, লাল শাপলা ফুলকে রক্ত কমল বলা হয়।

সাদা শাপলা যে কারনে জাতীয় ফুলঃ

সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক। এটা বিশ্বাস করা হয় যে শাপলার সাদা রং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আর পাপড়ি গুলোর মতো দেশের মানুষকে একত্রিত করে। তাই শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশে জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের পয়সা, টাকা ও দলিল পত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে। আরেক টি কারণ হলো, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। তাই সারাদেশে শাপলা পাওয়া যায়।

দেশের আনাচে-কানাচে নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুর-ডোবা ছড়িয়ে আছে। আর এখানে সারা বছর প্রচুর শাপলা ফোটে। বাংলাদেশে সারা বছর শাপলা কম বেশি সব জায়গায়ই হয়। তবে বেশি হয় র্বষা আর শরৎকালে। শাপলার ডাটা গ্রামের মানুষ সবজি হিসেবে খেতে খুব পছন্দ করে। আর এফুলের বীজও গুড়ো দিয়ে খই বানানো হয়।

সবজি শোভার জন্য শাপলা :

শাপলা প্রাচীন যুগ থেকেই বিভিন্ন জাতীর প্রার্থনা বা বাগান সাজানোর পাশাপাশি খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন: মিশর, চীন, জাপান ও এশিয়ার বিভিন্ন এলাকা শাপলার কান্ড বা ডাটা বা পুস্পদন্ড সবজী হিসেবে খাওয়া হয়। পূর্ণ বিকশিত শাপলা ফুলের গর্ভাশয়ে গুড়িগুড়ি বীজ থাকে। আঠালো এই বীজ বাংলাদেশের গ্রামের মানুষদের খেতে দেখা যায়।

এই বীজ ভেজে এক ধরনের খাবার খৈ তৈরি হয় যার নাম  “ঢ্যাপেরখৈ”। উদ্ভিদটির গোড়ায় থাকে আলুর মতএক ধরনের কন্দ যার নাম শালুক, অনেকে এটি সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে। নীল শাপলা ফুল ও লাল শাপলা ফুল ঘর সাজাতে ব্যবহৃত হয়। এটি বাগানের জলাধারে লাগানো বা অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখার জন্য খুব জনপ্রিয় একটি উদ্ভিদ। কখনো কখনএই উদ্ভিদ তাদের ফুলের জন্য বেড়ে উঠে।

শাপলার রাজ্য বরিশাল :

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিক ভাবেই শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রুপসী বাংলার এই রুপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে।

সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুলফোটে। আর ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে জেলা ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। শিগগিরই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারে বলে স্থানীয় দের ধারণা। বিলের চার পাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক মুখরিত “লালস্বর্গ”।

দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রঙ দেখে দুরূহ হয়ে উঠার মতো অবস্থা। দূরত্ব কমার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতা পাতায় ভরা বিলে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা সত্যিইসৌন্দর্যের লীলা ভূমি। বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনোমুগ্ধকর এ বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন পিপাসু প্রকৃতি প্রেমিরা। এ বিলের শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপনচিত্র। ফলে দিন-দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলার বিল’।

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে