Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩, ১১:১৩ এএম
সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

সুনামগঞ্জঃ টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে বানভাসী মানুষ।

সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগরসহ ছয় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার পাঁচ লাখের বেশি মানুষ।

রোববার বিকেলে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ঘুরে দেখা যায় হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু নিয়ে একে একে মানুষ আসতে শুরু করেছেন। বাচ্চাসহ পরিবার -পরিজন নিয়ে সরকারি কলেজের তিনটি কক্ষে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ভোর থেকে তাদের ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি বেড়ে বসত ঘরে থাকার মতো অবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই মাথা গোজার ঠাঁই পেতে এসেছেন কলেজে। তাদের মতো আরও অনেক পরিবার কলেজে এসে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তারা। 

শহরতলীর হাছননগরের কৃষক কাউছার মিয়া চলতি বছর ১০ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। সেখান থেকে ধান পেয়েছিলেন ৭০ মণ। এরমধ্যে ৫০ মণ ধান বিক্রি করে দেন। বাকি ৩০ মণ ধান খাওয়ার জন্য রেখে দেন। বন্যার পানি ঘরে ওঠায় বস্তাবন্দি ধানগুলো ঠেলাগাড়ি করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান।

কাউছার মিয়া বলেন, বন্যায় ঘরের সব ধান পানিতে ভেসে যায়। এ বছর ঘরে পানি প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ধানগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি।

দেশি-বিদেশি মুরগি বিক্রি করে সংসার চলে শাহীন মিয়ার। গত বছর বন্যার পানিতে ৫০টি মুরগি মারা যায়। এ বছরও বন্যার পানি ইতোমধ্যে বসতভিটায় উঠে গেছে। তাই স্ত্রী-ছেলেকে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে মুরগিগুলো খুঁজছি।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার নতুন হাছননগরের নার্গিস বেগম বলেন, ঘরে কোমড় পানি উঠে গেছে। বাচ্চা-কাচ্চা সামলানো খুব কঠিন হয়ে গেছে। তাই মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে কলেজে এসেছি। ঘরে পানি উঠে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এতক্ষণে নিশ্চিত ঘরে বুক সমান পানি উঠে গেছে। 

সুলতানপুরে ময়না বেগম বলেন, রাত্রেও ভালো ছিলাম। সকালে উঠে রান্না বসাইছি। রান্না হওয়ার আগেই ঘরে পানি চলে আসছে। হাটু সমান পানি রেখে আসছি ঘরে। আমার এলাকার ২০-২৫টি ঘরের একই অবস্থা। 

সুনামগঞ্জের নিচু এলাকা ও সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ৫-৬ লাখেরও বেশি মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকে বসতভিটার গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র নৌকায় নিয়ে ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার অনেকে কোনো রকম ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা মোকাবিলায় ৪৪৯ মেট্রিক টন জিআর চাল, ২২ লাখ টাকা ও দুই হাজার শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে।

এদিকে দ্রুত পানি বৃদ্ধি দেখে আকস্মিক বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে বেলা ১২টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তর প্রধান ও সাংবাদিকদের নিয়ে তাৎক্ষণিক জরুরি সভা করেন জেলা প্রশাসন। সভায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে সে সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। 

তিনি জানান, যেভাবে পানি বাড়ছে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি একটা বন্যার পূর্বাভাস আছে এমন অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সম্মিলিতভাবে আমরা কিভাবে সেটি মোকাবেলা করব তার প্রস্তুতি নিতে তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সভার আহ্বান করি। আমাদের অতীতে বড় ধরনের একটা বন্যা মোকাবেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার আলোকে এ বছর আমাদের প্রস্তুতি অনেক। তাই আশা করি এ বছর আমাদের কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের যারা বসতঘরে পানি ঢুকে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন তাদের ত্রানের আওতায় আনা হবে। 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তার জন্য আমাদের কয়েক শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য পুলিশ, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সচল নৌকা ও স্পিডবোট প্রস্তুত রাখা আছে। প্রত্যেক উপজেলায় চাল পাঠানো হয়েছে। নগদ টাকা ও শুকনো খাবার মজুদ আছে। পানি বৃদ্ধির কারণে যদি বিদ্যুৎ বন্ধ হয় তার জন্য জেনারেটর রাখা হয়েছে। মোবাইল যোগাযোগ যেন বিচ্ছিন্ন না হয় সেজন্য মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার জন্য বলা হয়েছে। এরপরও যদি মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায় তাহলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের যোগাযোগ অব্যাহত রাখার জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহারের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

জরুরি সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র নাদের বখত, ২৮ বিজিবি পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ, স্থানীয় সরকার পরিচালক জাকির হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রজত কান্তি সোমসহ অন্যান্য দপ্তর প্রধান ও গণমাধ্যম নেতারা।

বুইউ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে