Dr. Neem on Daraz
Victory Day

খোকসায় ভৌত অবকাঠামো ও ঔষধ সংকটে কমিউনিটি ক্লিনিক


আগামী নিউজ | কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২, ০৩:০৭ পিএম
খোকসায় ভৌত অবকাঠামো ও ঔষধ সংকটে কমিউনিটি ক্লিনিক

কুষ্টিয়াঃ দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রায় দুই দশক আগে সরকার সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। ওই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগণের দ্বার প্রান্তে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে কুষ্টিয়ার খোকসায় ১৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলায় মোট ১৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিক এর মধ্যে ২ টির অবস্থা জরাজীর্ণ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্লিনিকগুলো বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হলেও বর্তমানে এ দুটির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। এর মধ্যে বসোয়া কমিউনিটি ক্লিনিক গিয়ে দেখা যায় দেয়ালের থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে এবং জানা যায় একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ক্লিনিকে নেই পানির ব্যবস্থা। এমনকি এখানের এমমাত্র পানি পানের জন্য স্থাপিত টিউবয়েলটিও চুরি হয়ে গেছে।

একই চিত্র দেখা যায় কমলাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের। ভবনের মেঝে বসে গিয়েছে, বাথরুমের অবস্থাও নাজুক। নেই পানির ব্যবস্থা। এরই মাঝে ধুকে ধুকে চলছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা।

কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সি এইচ সি পি) দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্লিনিক গুলোতে মাসে একবার ওষুধ আসে। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এজন্য তারা রোগীদের সঠিকভাবে ঔষধ দিতে পারছেনা।

উপজেলার খোকসা ইউনিয়নের জিলাপি তলার বাসিন্দা রহিমা খাতুন (৫৫)। তিনি বলেন, আমাদের শারীরিক সমস্যা হলে আমরা মুড়াগাছা কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আসি। এখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া গেলেও সঠিকভাবে ওষুধ পাওয়া যায় না।

পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খাইরুল হোসেন (৪০)। গ্যাসের সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিতে এসেছেন কমলাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে। তিনি বলেন, ঘরের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকায় ওষুধ নিতে এসেছিলাম। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মাসের প্রথম দিকে আসলে ঔষুধ পাওয়া যায় সারা মাস কিছু ঔষধ থাকলেও সব ওষুধ পাওয়া যায় না। অসুখ-বিসুখ প্রতিমাসের প্রথমেই হলে ভালো হতো।

জানা যায়, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ছয় হাজার মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা। এসব ক্লিনিকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজননস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা।

বসোয়া কমিউনিটি ক্লিনিক এ সেবা দানকারী সি এইচ সি পি মোঃ জিয়াউল আলম বলেন, এই ক্লিনিকে পাঁচ বছর যোগদান করেছি। এখানে যোগদান করার পর থেকেই দেখছি দেয়ালের থেকে প্লাস্টার খসে পড়ে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ক্লিনিকটিতে নেই কোনো পানির ব্যবস্থা। পাশের বাড়ি থেকে পানি নিয়েএসে ব্যবহার করছি। ক্লিনিকের এমমাত্র পানি পানের জন্য স্থাপিত টিউবয়েলটিও চুরি হয়েছে দীর্ঘদিন যাবত।

ঔষধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাসে একবার স্বল্প পরিমাণ ওষুধ আসে। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এজন্য আমি রোগীদের সঠিকভাবে ঔষধ দিতে পারছিনা।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ২০১১ সাল থেকে কাজ করছি এখন পর্যন্ত বেতন বাড়েনি। এখানে ১ জন স্বাস্থ্য কর্মী ও ১ জন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী থাকলেও আমার কোন কাজে আসে না।

রবিবার দুপুর ১২ টায় কমলাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা দানকারী সি এইচ সি পি  লিটন কুমার বিশ্বাসকে ৪ জন রোগীকে সেবা দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, আমার ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ জন চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু ক্লিনিকে পানির ব্যবস্থা নাই। টয়লেটের অবস্থাও নাজুক। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। তিনি আরো বলেন, যে পরিমাণ ঔষধ আসে তাদিয়ে রোগী দেখা অসম্ভব হয়ে পরে। রোগীদের সঠিক পরিমাণে ওষুধ দেয়া সম্ভব হয় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, উপজেলা ১৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৫ টি সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে।  বাকি ২ টিও দ্রুতই সংস্কার করা হবে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলায় প্রয়োজনের তুলনায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা কম। আজইলে নতুন একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা চলছে। নতুন আরো চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য যদি কেউ জমি দান করেন তাহলে সেখানে ভবন করা হবে। এ ছাড়া ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়। ওষুধের পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য জানানো হয়েছে।

আগামীনিউজ/এমবুইউ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে