Dr. Neem on Daraz
Victory Day

গেমিং ল্যাপটপ কিনতে অপহরণ, মুক্তিপণ না দেওয়ায় হত্যা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক, নরসিংদী প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২১, ১০:০২ এএম
গেমিং ল্যাপটপ কিনতে অপহরণ, মুক্তিপণ না দেওয়ায় হত্যা

ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদীঃ জেলার রায়পুরায় চাঞ্চল্যকর শিশু ইয়ামিন হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গেমিং ল্যাপটপ কিনতে ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে শিশুটিকে অপহরণের পর হত্যা করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে তারা৷ 

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো উত্তর বাখরনগর গ্রামের সিয়াম উদ্দিন (১৮), রাসেল মিয়া (১৯), মো. সুজন মিয়া (২৪) ও কাঞ্চন মিয়া (৫২)। নিহত ইয়ামিন (৮) রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর মধ্যপাড়া এলাকার প্রবাসী জামাল মিয়ার ছেলে।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর থেকে শিশু ইয়ামিন মিয়া নিখোঁজ ছিল এবং গত শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের উত্তর বাখরনগর গ্রামের এক ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ইয়ামিন একই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জামাল মিয়ার ছেলে এবং বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী বলেন, ২৮ নভেম্বর সকালে ইয়ামিনের মা সামসুন্নাহার বেগম ইউপি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময় ছেলেকে বাড়িতে রেখে যান। ভোট দিয়ে দুপুরে বাড়ি ফেরার পর থেকে ইয়ামিনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেও ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ইয়ামিন তাদের হেফাজতে আছে জানায়। এ সময় মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারলে ইয়ামিনকে হত্যা করা হবে বলে জানায়। এত টাকা দিতে পারবে না জানালে অপহরণকারী পাঁচ লাখ টাকায় ইয়ামিনকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। পরে বিকাশে এক লাখ টাকা পাঠালে অপহরণকারী তার ফোনটি বন্ধ করে দেয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ১ ডিসেম্বর রাতে নিখোঁজের ঘটনায় ইয়ামিনের মা অজ্ঞাতনামা আসামি করে রায়পুরা থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। এরপর থেকেই ইয়ামিনের সন্ধানে পুলিশ তদন্তে নামে। ৩ ডিসেম্বর সকালের দিকে বাখর নগর গ্রামের ধানক্ষেত থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহটি ইয়াছিনের বলে শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। মরদেহ উদ্ধারের পর আসামি গ্রেফতারে অভিযানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাখরনগর গ্রাম থেকে সিয়ামকে ও পিরিজকান্দি গ্রাম থেকে রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্কচটেপ, বালিশ, অপহরণে ব্যবহ্নত মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়।

সাহেব আলী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইয়ামিনকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। অপহরণের দুদিন আগে গেমিং ল্যাপটপ কিনে ইউটিউবে গেম লোড করে টাকা উপার্জনের জন্য তারা ইয়ামিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। নির্বাচনের দিন রাসেল ও সিয়াম খেলার ছলে ইয়ামিনকে সিয়ামের বাড়ির নির্জন রুমে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মুখ, হাত পা বেঁধে বস্তায় ভরে রাখেন। পরে তারা ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি ও ক্রাইম পেট্রোল দেখে মোবাইলে স্ক্রিপটেড অ্যাপ ব্যাবহার করে ভিপিএনের মাধ্যমে ইয়ামিনের মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। ১ লাখ টাকা পেলেও মুক্তিপণের বাকি টাকা না পেয়ে অপহরণের দিনই সিয়াম ও রাসেল বালিশচাপা দিয়ে ইয়ামিনকে হত্যা করেন। পরে মরদেহ বস্তাবন্দি করে গোয়ালঘরে রাখে। ঘটনার চারদিন পর তারা বস্তাবন্দি মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে আসেন তারা। পরবর্তীতে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনায় উত্তর বাখরনগর গ্রাম থেকে সুজন ও কাঞ্চনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

আগামীনিউজ/বুরহান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে