Dr. Neem on Daraz
Victory Day

উত্তরাঞ্চলে প্রিন্টিং ব্যবসা গিলে খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম


আগামী নিউজ | জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১, ০২:৩২ পিএম
উত্তরাঞ্চলে প্রিন্টিং ব্যবসা গিলে খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

প্রতীকী ছবি

উত্তরাঞ্চল: প্রিন্টিং ব্যবসা গিলে খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বেশ কয়েক বছর আগেও জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক বা দলের নেতারা জনগনকে শুভেচ্ছা জানাতে প্রেসে ব্যানার, বিলবোর্ড এবং পোস্টার তৈরি করে প্রচারণা চালাতো।

ঈদ, পূজা, জাতীয় দিবস ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এসব করা হতো। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও নিজের পরিচিতি সমাজে ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করতেন ওইসব উপকরণ। যুগের হাওয়ায় এখন সনাতন নিয়মে পরিণত হয়েছে বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার ছাপানোর কাজ।

এ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন হাতে হাতে থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী কিংবা নেতা নেত্রীরা কম্পিউটারে নিজের ছবি, নেতানেত্রীদের ছবি দিয়ে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার ডিজাইন করে সরাসরি ফেইসবুক তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে। এতে নিমিষে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে ওইসব ব্যক্তিরা।

কম্পিউটারে বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টারের ডিজাইন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। অথচ বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার তৈরি করে প্রচার করতে খরচ হয় হাজার হাজার টাকা। এমনকি এসব কাজ করতে গিয়ে তোষামোদ করতে হয় শ্রমজীবি মানুষদের। বর্তমানে ডিজিটাল যুগের ছোয়ায় সবকিছু আমুল পরিবর্তন হতে চলেছে।

কথা হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ইউপি নির্বাচনের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মোখলেছুর রহমান, দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দীপক চন্দ্র রায় ও নীলফামারী ডিমলা উপজেলার ছাতনাই ইউনিয়নের আসাদুর রহমানের সঙ্গে। তারা সবাই ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চাইছে। নৌকার মাঝি হতে শুরু করেছে তারা দৌড় ঝাপ। সম্ভাব্য ওইসব প্রার্থীরা জানান, বিলবোর্ড, ব্যানার বা পোস্টার তৈরি করে নিজের প্রার্থীতা জানান দিতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রেসে তৈরি করে বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার লাগাতে লাগবে মজুর। এসব প্রচারণার উপকরণ বয়ে নিয়ে যেতেও অর্থের ব্যয় হয়। প্রয়োজন পড়ে বাঁশ, খিলকাঠি ও আঠার। এছাড়াও বিলবোর্ড ব্যানার চুরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পোস্টার নষ্ট হতে পারে শতভাগ। কিন্তু কম্পিউটারে ডিজাইনকৃত বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলে কোনপ্রকার আর্থিক ক্ষতির বালাই নেই। থাকবে না নষ্ট বা চুরি হওয়ার আশংকা। এতে ব্যয়ও হয় খুব সামান্য।

ডিজিটাল যুগের প্রচারণা বিষয়ে মন্তব্য জানতে কথা হয় প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম মন্ডলের সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন, প্রযুক্তি শুধু আশির্বাদ নয়, অভিশাপও বয়ে আনছে। মানুষ হাতের মুঠে সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারাচ্ছে। এতে করে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। গরিব দেশে প্রযুক্তি গরীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে।

তার মতে, ধনীর প্রযুক্তি গরীবের অভিশাপ। আগে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগানোর কাজে মানুষের প্রয়োজন হতো। এতে করে অল্প সংখ্যক মানুষ অল্প কয়েকদিনের জন্য হলেও কাজ পেত। যৎ সামান্য আয়ও হতো। কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহারে কাজের দুয়ার বন্ধ হতে চলেছে। অর্থবান মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে কম সংখ্যক লোক দিয়ে বেশি কাজ করে অধিক মুনাফা লুটছে। এ কারণে সমাজে বাড়ছে বৈষম্য। নষ্ট হতে চলেছে আর্থিক ভারসাম্য। শতকোটি মানুষের সম্পদ পুঞ্জিভূত হচ্ছে হয়তোবা মাত্র ১০ জনের হাতে। এমন অবস্থা সমাজে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

কথা হয়, একতা প্রেসের মহাব্যবস্থাপক রেজাউল করিম রিপনের সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন, আগে ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ ও জাতীয় দিবসে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার বানানোর হিড়িক পড়ে যেতো। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান মেম্বার প্রার্থীরা আগাম প্রার্থীতা ঘোষণা করতে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোস্টার তৈরি করতে প্রেসে ভীড় করতো বড় দলের নেতানেত্রীরাও নিজ নিজ এলাকার মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড প্রেসে তৈরি করে নিজ এলাকায় নিয়ে যেত। এতে করে প্রেস ব্যবসায়ীর বেশ আয়ও হতো। বেকার যুবকরা পেত কাজের সুযোগ। এখন আর মানুষ প্রার্থীতা জানান দেয়ার জন্য কাজ করতে প্রেসে আসে না। কম্পিউটারে বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টারের ডিজাইন করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে। এর ফলে যৎ সামান্য ব্যয় ও সফলতা মিলছে। অল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা যেখানে মিলবে মানুষ সেখানেই যাবে বা সেই কাজটিই করবে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন প্রিন্টিং ব্যবসা গিলে খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। 

আগামীনিউজ/ হাসান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে