Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বেনাপোলে দাদন ব্যবসায়ী হাসেমের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ী ও পরিবার


আগামী নিউজ | মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২১, ০৫:৩০ পিএম
বেনাপোলে দাদন ব্যবসায়ী হাসেমের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ী ও পরিবার

ছবি: সংগৃহীত

যশোরঃ জেলার বেনাপোল পৌরসভার অভ্যন্তরে সমবায় সমিতি ও সুদ ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। বর্তমান করোনা কালীন সময়ে কাজ কর্ম হারিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেয়ে বিভিন্ন সমবায় সমিতি ও অনুমোদন বিহীন সুদের কারবারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিঃস্ব এখন বেনাপোলের বিভিন্ন ছোট বড় ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবার। অনেকে আবার আত্মহত্যার মত পথও বেচেঁ নিচ্ছেন।

বেনাপোল বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, বেনাপোল বাজারে ব্যবসার জন্য সুদে টাকা নিয়ে নিঃস্ব অনেকে। কেও দোকান ছেড়ে দিয়ে এখন পথের ভিখারী আবার কেউ লোক লজ্জার ভয়ে বসত বাড়ি জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হচ্ছেন।

বেনাপোল রেলস্টেশন রোডের সীমান্ত বেডিং হাউসের মালিক সাইদুর রহমান সালাম জানান, গত ৩ বছর আগে বেনাপোলের ভবেরবের গ্রামের জেনারেটর ও সুদ ব্যবসায়ী হাশেম আলীর নিকট থেকে ৭ লাখ টাকা সুদে নেই। সুদের টাকার লাভ প্রতি মাসে সুদ হিসাবে লাখে ৬ হাজার টাকা করে অর্থাৎ ৪২ হাজার টাকা মাসে সুদ দিতে হবে। এ পর্যন্ত সুদ ব্যবসায়ী হাসেম আলীকে প্রায় ১৩ লাখ টাকা দিয়েছি তবুও সে আমার কাছে এখনও ৭ লাখ টাকা পাবে বলে চাপ দিচ্ছে। সালাম আরোও জানান, সাদা ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে এবং ব্যাংকের চেক সই করে রাখে। এখন প্রতিনিয়ত সুদ ব্যবসায়ী হাসেম আলী আমাকে চেক ও ষ্ট্যাম্পের ভয় দেখাচ্ছে। পিতার কিছু জমি বিক্রি করেও সুদের টাকা দিয়েছি। বর্তমানে আমি সুদের টাকা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।

বেনাপোল ডাবলু মার্কেটের ব্যবসায়ী সম্রাট সু-ষ্টোরের মালিক নিয়ামুল জানান, দোকানে মাল তোলার জন্য সুদ ব্যবসায়ী হাসেম আলীর নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলাম। সুদের টাকা ঠিক মত ফেরত দিতে না পেরে বর্তমান দোকান ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে ঢাকায় পাড়ি দিয়েছি।

বেনাপোলের ভবেরবের গ্রামের ব্যাংকের পিয়ন (বর্তমানে চাকুরিচ্যুত) আলী আকবার গত ৫ বছর আগে সুদ ব্যবসায়ী হাশেমের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে ৩ লাখ টাকা নিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করেন। গত এক বছরে তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে এক লাখ ২০ হাজার টাকা সুদ দেন। সংসারের খরচ চালিয়ে ও সুদের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন। গত তিন বছরে ৩ লাখ টাকার সুদ বেড়ে ৯ লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় সুদের দেনা পরিশোধ। টাকার জন্য গত ২ বছর আগে আলী আকবারকে শার্শায় আটকে রেখে তার মাকে ডেকে নিয়ে টিপ সই নিয়ে তার জমি লিখে নেয় সুদকারবারী হাসেম আলী।

এই ব্যাপারে আলী আকবরের মা তফুরন নেছা বলেন, টাকা জামিনদার হিসেবে আমার একটি টিপসই নিয়েছে হাসেম আলী। এখন হঠাৎ করে দেখছি হাসেম আমার বসতভিটা দখল ও আমাদের উচ্ছেদ করতে এসেছে। আমি এবং আমার ছেলে নাকি তাকে আমার বসবাসের বসতভিটা লিখে দিয়েছি। এবিষয়ে আমি বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি।

সুদের ফাঁদে পড়া ভুক্তভোগীরা জানান, সুদ ব্যবসায়ীরা টাকা দেওয়ার সময় জমির দলিল, ব্যাংকের ফাঁকা চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখেন। যখন কেউ টাকা ফেরত দিতে না পারে তখন ওই চেক স্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত টাকা বসিয়ে পাওনাদারের নিকট দাবি করে।

এমনি একজন সুদ ব্যবসায়ী হাসেম আলী লোক দেখানো জেনারেটর এবং সমিতি ব্যবসা থেকে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বেনাপোল বাজারে গুরুত্বপূর্ন স্থানসহ কয়েকটি জায়গায় বাড়ি ও জমি রয়েছে। সুদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে অনেকের কাছে থেকে জোরপূর্বক এসব সম্পদ লিখে নিয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। বেনাপোলের সাধারন মানুষও তাকে সুদখোর হাসেম বলে এক নামে চেনে।

এ ব্যাপারে হাসেম আলীর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার বিষয়ে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি নগদ ১৫ লাখ টাকা দিয়ে আকবার আলী ও তার মায়ের কাছ থেকে জমিটা কিনেছি।

এ ব্যাপারে বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বেনাপোল বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, চড়া সুদ ব্যবসায়ীদের কারনে অনেক ছোট বড় ব্যবসায়ীরা আজ নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে। প্রতি লাখে মাসে ১০/১৫ হাজার টাকার সুদ দিতে না পেরে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে তারা অত্যাচার নির্যাতন এমনকি মামলাও করেন। ফাঁকা স্ট্যাম্প বা চেকে স্বাক্ষর রেখে টাকা দিতে না পারলে মূল টাকার দ্বিগুণ বাড়িয়ে লেখে স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক এবং স্টাম্পে। সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান চালিয়ে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানান তিনি।  

সুদ ব্যবসায়ীদের ব্যপারে শার্শা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এস এম আক্কাস আলী জানান, সমবায় সমিতি  লাইসেন্স ব্যাতিত সমিতি করে কোন টাকা লেনদেন করা যাবে না। তাছাড়া সমবায় নিবন্ধন ছাড়া যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সুদের টাকা লেনদেন করে তাহলে তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এছাড়াও সুদ কারবারীদের বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে ইউএনও বরাবর আবেদন করে প্রতিকার পেতে পারেন বলে তিনি জানান।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা বলেন, অভিযোগ পেলে এসব অবৈধ ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে