Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ভারত থেকে দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় কয়েক হাজার বাংলাদেশি


আগামী নিউজ | মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১০, ২০২১, ০৭:২৩ পিএম
ভারত থেকে দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় কয়েক হাজার বাংলাদেশি

ছবিঃ আগামী নিউজ

যশোরঃ অপ্রতুল কোয়ারেন্টাইন অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য দিক বিবেচেনায় ৯ মে থেকে কলকাতা উপ হাইকমিশন থেকে এনওসি ইস্যু বন্ধ ।। কতকাতা উপ হাইকমিশনের চিঠিতে ভারতে আটকে আছে কয়েক হাজার বাংলাদেশি : অর্থ সঙ্কটে বাংলাদেশিরা করোনার যাত্রী চলাচল নিষেধাজ্ঞায় কয়েক হাজার বাংলাদেশি আটকে আছে ভারতে। তারা কবে নাগাদ বাংলাদেশে ফিরতে পারবে তার কোন নিশ্চিয়তা মিলছে না।

এদিকে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে যাত্রী চলাচল বন্ধে আরো ১০ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। অপ্রতুল কোয়ারেন্টাইন অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য দিক বিবেচেনায় ৯ মে থেকে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের অনুকুলে বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য এনওসি ইস্যু বন্ধ থাকবে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা।

এসব বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে কলকাতায় এসে মানবেতর মধ্যে দিনাদিপাত করছে। তাদের কাছে যে টাকা ছিল তাও শেষ। বিভিন্ন পরিচিতদের কাছ থেকে ধার নিবে তাও পাচ্ছে না। বিপদের মধ্যে তাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। কিছু লোকজন বিকল্প পথে (হুন্ডির) টাকা পাঠাতে পারলেও অনেকে তাও পারছে না। বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তের ম্যানিচেজ্ঞারগুলো বন্ধ থাকায় অনেকে এখানে এসেও টাকা পাঠাতে পারছেন না। ভারতে যে ভাবে ভেরিয়েন্ট ভাইরাস প্রভাব ছড়াচ্ছে তাতেও এসব বাংলাদেশিরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মরত ডাক্তার আবু তাহের জানান, নিষেধাজ্ঞার গত ১৫ দিনে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৬৯৫ জন। ভারতে ফিরে গেছেন ১৮৫ জন। এর মধ্যে ভারত থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন ১৭ জন পাসপোর্টযাত্রী। ভারত থেকে আসা বাংলাদেশিদের সাধারণ যাত্রীদের বেনাপোল, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেল নিজ খরচে রাখা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত যাত্রীদের যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে রাখা হয়েছে।

ভারতের করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট রোধে বাংলাদেশ সরকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪ দিনের ভ্রমণ সীমান্ত পথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে নতুন করে কোন পাসপোটধারী যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেনি। তবে নিষেধাজ্ঞার আগে যারা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আটকা পড়েছিল তারা ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র ও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে ফিরছিল। এখন সেটাও বন্ধ।

মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সকাল ৮ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সচল থাকবে। তবে নতুন করে ভারত ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরও ১৪ দিন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব।

তিনি জানান, করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ রোধে ও শার্শা উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেনাপোল ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৩টা পর্যন্ত সচল থাকছে। এই সময়ের মধ্যে দুই দেশে আটকা পড়া পাসপোর্ট যাত্রীরা আসলে নিজ নিজ দেশে প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়া গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ দিনের জন্য ভারত ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে ভারতে করোনা পর ভেরিয়েন্ট ভাইরাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার নতুন করে আরও ১৪ দিন নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বলে জানান তিনি।

বেনাপোলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে হোটেল ভাড়া বেশি আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে হোটেল মালিকদের কড়া হুঁশিয়ারি দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা। বুধবার বিকেলে বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বেনাপোলের আবাসিক হোটেলে মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

বেনাপোলের সান সিটি আবাসিক হোটেলের মালিক রাশেদুজ্জামান রাসেল জানান, বেনাপোলের কিছু অসাধু আবাসিক হোটেলে ব্যবসায়ীরা কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে হোটেল ভাড়া বেশি নিচ্ছে। আর যেসব আবাসিক হোটেলে খাবারে ব্যবস্থা আছে তারা নিন্মমানের খাবার দিয়ে চড়া দাম নিচ্ছে এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে। এজন্য উপজেলা প্রশাসন বেনাপোলের আবাসিক হোটেলের মালিকদের ডেকে আলোচনা সভার মাধ্যমে কোনো অনিয়ম না করার কড়া হুঁশিয়ারি দেন।

বেনাপোলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা কয়েকজন পাসপোর্ট যাত্রী হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে জানান, তারা চিকিৎসা করাতে ভারতে গিয়ে সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। দেশে ফিরে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বেনাপোলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু কিছু অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীরা তাদের এক প্রকার জিম্মি করে হোটেল ভাড়া বেশি আদায়, নিন্মমানের ও বাসি খাবার দিয়ে তাদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করছে। এবং হোটেলের দুই এক দিনের ভাড়া বাকি থাকালে তাদের রুমের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বন্ধ করে হয়রানি করছে।

শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা জানান, তাদের কাছে অভিযোগ আছে ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের করোনা ভেরিয়েন্ট রোধে বেনাপোলের কিছু আবাসিক হোটেলে ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কিন্তু অসহায় এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে হোটেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া বেশি আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম করছে। এজন্য এসব হোটেল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে কোনো প্রকার ভাড়া বেশি আদায় ও কোনো অনিয়ম না করে সেজন্য কড়া হুঁশিয়ারি করে দেওয়া হয়েছে। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, নাভারন সার্কেল (এএসপি) জুয়েল ইমরান, শার্শা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাসনা শারমিন মিথি, বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান, ইমিগ্রেশন (ওসি) আহসান হাবিবসহ বেনাপোলে আবাসিক হোটেল মালিকরা।

এদিকে রোববার (৯ মে) দুপুরে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আগত বাংলাদেশি নাগরিকদের খুলনা বিভাগের বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলোতে রাখা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আজ সোমবার (১০ মে) থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

‘বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আগত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে ২৬ এপ্রিল থেকে আগত যাত্রীদের খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়েছে।’ জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জেলা সিভিল সার্জনের সহায়তায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা নাগরিকদের দেখাশোনা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন জেলার এসব কোয়ারেন্টাই সেন্টারগুলোতে বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

ইসমাইল হোসেন বলেন, ২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে পর্যন্ত ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২ হাজার ৬৯৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক এসেছেন। তাদের প্রথমত বেনাপোল পরে যশোরের বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। পরে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় পর্যায়ক্রমে খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরা সুস্থ আছেন। যাদের করোনা পজিটিভ রয়েছে তাদের সংক্রমণজনিত জটিলতা নেই। তবে সংক্রমিত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ আলাদা করোনা ইউনিটে রাখা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন কোনো সংক্রমিত যাত্রীকে আনা হবে না।

অন্যদিকে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যতীত অন্য সকল স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে যাত্রী চলাচল বন্ধের সময় আরো ১৪ দিন বর্ধিত করা হয়েছে। যা ১০ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

অপ্রতুল কোয়ারেন্টাইন অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য দিক বিবেচেনায় ৯ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অনুকুলে বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন কলকাতা কর্তৃক এনওসি ইস্যু বন্ধ থাকবে।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে