Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মশার জালায় অতিষ্ট রূপগঞ্জবাসীঃ জনপ্রতিনিধিরা নীরব


আগামী নিউজ | নজরুল ইসলাম, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৩:০৯ পিএম
মশার জালায় অতিষ্ট রূপগঞ্জবাসীঃ জনপ্রতিনিধিরা নীরব

আগামী নিউজ

নারায়নগঞ্জঃ জেলার শীতের শেষে গরম পড়ার সাথে সাথে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে রূপগঞ্জের প্রতিটি পাড়া মহল্লায়।

“আমি বন্ধি কারাগারে আছিগো মা বিপদে। মশার কামড়ে আর ভাল লাগে না” কারাগারে এ গান এখন কেউ গায় কিনা জানা না থাকলেও রূপগঞ্জবাসী প্রতিনিয়তই মশার জালায় অতিষ্ট হয়ে মনে মনে এ গানই উচ্চারণ করছেন।

“কি আর কমু গো ভাই যেই দিন থেকে গরম শুরু হইলো সেদিন থেকেই মশার ভনভনানি আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ব্যবসা-বানিজ্য বাদ দিয়ে মশা তাড়াতেই ব্যস্ত থাকতে হয়” কথাগুলো বলছিলেন নগরপাড়া বাজারের চা দোকানী রিগেল মিয়া।

রূপগঞ্জে ইউনিয়নের আওতাভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে ও পৌরসভায় মশার উপদ্রবের কারণে সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। দিন দিন বেড়ে চলছে এ সমস্যা। সচেতন এলাকাবাসীরা মনে করেন, যদি প্রতিটি কাউন্সিলর ও মেম্বার একটি করে মশক নিধন যন্ত্র নিজ উদ্যোগে ক্রয় করে মশা নিধন করার ব্যবস্থা করতো তাহলে মশা অনেকটাই কমে আসতো। তাই সকল জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগ গ্রহন করলে মশার কামড়ের যন্ত্রনা কমে আসবে।

“ তারা তা করবেন না, এখন ভোট আইছে, খালি ভোট ভোট আর শুধু মিঠা মিঠা কথা। ভোট গেলে তাদের আর চোখেও দেখা যায় না। পাশ করে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন জনপ্রতিনিধিরা। জনগনের কথা বেমালুম ভুলে যান” এমনি করে ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বলছিলেন রূপগঞ্জ উপজেলার একজন ভোটার।

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে রূপগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। এদিকে বিষাক্ত কয়েল জ্বালিয়ে, ধূপ পুড়িয়ে, অ্যারোসল স্প্রে করে কিংবা মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না মানুষ।

মশার কয়েল বিক্রেতা নগরপাড়া বাজারের দোকানদার ফজুল মিয়া আগামী নিউজকে জানান, এখন কয়েল ভালই বেচাকেনা হচ্ছে। জানি কয়েলের ধোঁয়ায় মানুষের ক্ষতি হয়। তবুও সবায় বিক্রি করছে তাই আমিও বেছি। স্কুল-কলেজগুলোতেও দিন দিন বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব। অথচ এ বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। মশার জন্মস্থান নোংরা ড্রেন ও জলাশয়গুলোও পরিস্কার করা হচ্ছে না। মশার লার্ভা মারার জন্যও লার্ভিসাইডসহ অন্য কোনো ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে না।

নদীপারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এলাকাতে মশা ছিল না। নদী-নালার পচা পানি আসার পর থেকে মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পচা পানি মশার বংশবৃদ্ধির কারণ। তা ছাড়া নোংরা ড্রেন ও জলাশয় তো রয়েছেই। রাতে তো বটেই; দিনেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না তাদের। পুরো রূপগঞ্জই যেন মশার দখলে! শীত শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে ওঠায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জলাশয় ও জমে থাকা ময়লার স্তূপে মশার প্রজনন বেড়ে গেছে।

ফলে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বাজারগুলোতেও মশার উৎপাত ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার শতাধিক বাজার ও এর  আশপাশ এবং ড্রেনগুলো অপরিষ্কার থাকায় স্থানগুলো মশার চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া বাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে, মহসড়কের পাশে, খেলার মাঠ, খালের পাড়ে, নদীর তীরে, পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ময়লার স্তূপ। সেগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় মশা তৈরির কারখানায় পরিনত হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় ডাস্টবিন থাকলেও তার যথাযথ ব্যবহার নেই। ফলে যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ থেকে মশার প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীরা ক্ষুব্ধ। অনেকে মনে করেন, তিন দিন পরপর ড্রেনগুলোতে ওষুধ ছিটানোসহ স্প্রে করতে পারলে মশা কমে যাবে। এজন্য মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের আলাদা একটা বাজেট থাকা উচিত।

রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন আহমেদ আগামী নিউজকে জানান, সরকারিভাবে মশার উপদ্রব বিষয়ে জানলেও মশক নিধনের প্রয়োজনীয় ওষুধ না সরবরাহ করায় ইউনিয়ন পর্যায়ে তা দেয়া হচ্ছে না।

তারাব পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী আগামী নিউজকে জানান, পৌরসভার মশক নিধন কাজ খুব শিঘ্রই শুরু করা হবে। তখন আর এমন সমস্যা থাকবে না। কর্মীরা বলেন, নদীপারের মশাগুলো নিধন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ রাজধানী ঢাকার বর্জ্যে দূষিত শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর ময়লা-আবর্জনাযুক্ত ও উভয় পারের ঝোপঝাঁড়ে জন্ম নেয়া মশাগুলো ধ্বংস করা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে।

আশঙ্কার কথা হচ্ছে, শীতের পর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মশার ডিম একযোগে ফুটতে থাকে। অন্যদিকে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হলে তো কথাই নেই, বৃষ্টির জমা পানিতে ভয়ংকর এডিস মশা বেড়ে যায়।

ডা. মেহেদী হাসান আগামী নিউজকে বলেন,  এডিস মশাই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা এ তিনটি রোগ ছড়ায়। এতে হাত-পা বা শরীরের অন্য যে কোনো অঙ্গ ফুলে যায়। তাই এসব রোগ ছড়ানোর আগেই দ্রুত মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নুর জাহান আরা খাতুন বলেন, মশা ও মাছি অনেক ভয়াবহ রোগের প্রভাব বিস্তার করে। যথাসম্ভব মশা ও মাছির কামড় থেকে বাঁচার চেষ্ঠা করতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব কয়েল, স্প্রে ও নানাধরনের বিষাক্ত দাহ্য পদার্থের ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ, এসব দাহ্য পদার্থের ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে ক্যন্সারসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করে যা জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম আগামী নিউজকে বলেন, গ্রামাঞ্চলে সাধারণত মশার উপদ্রব কম থাকে। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তবে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পচা পানির সমস্যার সমাধান না করতে পারলে মশা নির্মূল হবে না।

আগামীনিউজ/এএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে