Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পেশা বদল করছে বরিশালের প্রকাশনী ব্যবসায়ীরা


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম
পেশা বদল করছে বরিশালের প্রকাশনী ব্যবসায়ীরা

দফায় দফায় কাগজপত্র ও স্টেশনারি মালামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে প্রকাশনী ব্যবসায়ীরা। গত দুই থেকে তিন বছরের ব্যবধানে কয়েক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে কাগজপত্র ও স্টেশনারি মালের। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা মালামাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। অপরদিকে মালামাল কিনতে ভোগান্তিতে পড়েছে ক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি প্রকাশনী সংস্থা ঘুরে জানা গেছে এমন তথ্য।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে অনেকেই বাধ্য হয়ে আদি এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে।

বরিশালে আদি কাগজপত্র ও স্টেশনারি মালামালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুনশী প্রকাশনীর পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সেই ১৯৭৪ সালের পর থেকে (৪৮ বছর) একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে যে হারে মালামালের দাম বেড়েছে তা এর আগে কখনও দেখেনি।

তিনি বলেন, বেশিদিন আগের কথা নয়, মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে কোনো কারণ ছাড়াই লাগামহীনভাবে সকল কাগজপত্র ও স্টেশনারি মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার আগে যেই দামে মালামাল ক্রয় করেছি, এখন অদৃশ্য কারণে সেই একই জিনিস তার দুই থেকে তিন গুণ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

তাছাড়া আমরা ঢাকা থেকে মালামাল ক্রয় করে আনি। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধির নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে না পারলেও তারা নিয়মিত দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে আমাদেরও মালামালের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয়। এ বিষয় নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অনেক সময় বাকবিতন্ডায়ও জড়াতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে ‘লাগামহীন আকাশচুম্বী মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমরা অসহায়’ লেখা বোর্ড টানিয়ে রাখতে হয়েছে। যাতে ক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়াতে না হয়।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, দুই বছর আগে যেই কাগজ টন প্রতি ২০-২১ হাজার টাকায় ক্রয় করেছি, এখন সেই কাগজ টন প্রতি ৪১ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। রেজিস্টার খাতা ২০২১ সালে রিম প্রতি ক্রয় করেছি ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা করে। এখন ২০২২ সালে এসে সেই খাতার রিম ক্রয় করছি ১ হাজার ৯০ টাকা করে। ২০২১ সালে ৬৫ গ্ৰাম কাগজের রিম ক্রয় করেছি ১ হাজার ২শ ৮৫ টাকা করে এখন সেই কাগজ ২৬শ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ৫৫ গ্ৰাম কাগজ ২০২১ সালে ছিল ১ হাজার ৮৫ টাকা, ২০২২ সালে এসে এখন তা বেড়ে ২ হাজার ৫০ টাকা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি কালি (কোরিয়ান) ২ পাউন্ড বছর আগে ছিল ৩শ ৮৫ টাকা, এখন তা হয়েছে ৭ শ টাকা।

মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানাতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকার ব্যবসায়ীরা একটা সিন্ডিকেট করে এমন মূল্য বৃদ্ধি করছে। প্রকাশনী ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। ফলে মূল্য বৃদ্ধি হলেও অতিরিক্ত মূল্যে মালামাল ক্রয় করে ব্যবসা করতে হচ্ছে। অনেকেই মূল্য বৃদ্ধির কারণে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী বেতন, মালামাল আনা-নেওয়ার পরিবহন খরচ দিয়ে পোষাতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এ আদি ব্যবসাও একদিন ছেড়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের এখনি নজর দেওয়া প্রয়োজন।

বরিশাল নগরীর অপর এক পুরাতন কাগজপত্র ও স্টেশনারি ব্যবসায়ী মেসার্স মুননী কাগজ ঘর। এই প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর মো. রিয়াজ আহমেদ বলেন, ৩০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছি। এখন প্রায় লোকসান দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। যে হারে মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, যদি অন্য কোনো কাজ জানা থাকত, তাহলে সেই পেশায় চলে যেতাম। শিখেছি শুধু এই ব্যবসা, তাই ছাড়তেও পারছি না। যেভাবে কাগজপত্র ও খাতা কলমের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন দিয়ে পোষাতে পারছি না।

রিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, গত ৬ মাস আগে যেই কাগজ দিস্তা প্রতি ক্রয় করেছি ১৫ টাকা করে, সেই কাগজ এখন দিস্তা প্রতি কিনতে হচ্ছে ৩০-৩২ টাকায়। এভাবে কাগজপত্র, খাতা-কলমসহ স্টেশনারি প্রতিটি মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ঢাকা ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধির সঠিক কোনো কারণ জানাতে পারছেন না। তারা জানতে চাইলে শুধু বলে কাগজ তৈরির কাঁচামাল সংকট, এলসি বন্ধ, ডলার সংকটের দোহাই দিয়ে মূল্য বৃদ্ধির পুরো বিষয় এড়িয়ে যায়।

এভাবে চলতে থাকলে প্রকাশনী ব্যবসায়ীরা পর্যায়ক্রমে পেশা বদল করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সরকারের এখনি এই বিষয়ে সঠিক তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে