Dr. Neem on Daraz
Victory Day

শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করাল ছাত্ররা


আগামী নিউজ | জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০, ০৪:১১ পিএম
শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করাল ছাত্ররা

সংগৃহীত ছবি

বরিশালঃ জেলার এক শিক্ষককে মারধর করে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

গত রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে এই ভিডিও ভাইরাল হয়। তবে জানা গেছে ঘটনাটি এক মাস আগের।

শিক্ষক মিজানুর রহমান সজল বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের আয়লা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নগরীর রুপাতলীস্থ জমজম ইন্সটিটিউটে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি পটুয়াখালীসহ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ করোনাকালে তিনি পুনরায় জমজম ইন্সটিটিউটে অনলাইনে মেডিকেল ডিপ্লোমার কয়েকটি ক্লাস নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক। তবে তাকে পরবর্তী ক্লাস নেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রীকে বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়ার প্রলোভনে অনৈতিক প্রস্তাব দেব না শপথ করে সাবেক ওই শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। ভিডিওতে কয়েকজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও কাউকে দেখা যায়নি। তবে বোরকা পরিহিত এক ছাত্রীকে দেখা গেলেও তার মুখমণ্ডল দেখা যায়নি।

এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক মিজানুর রহমান সজল বলেন, জমজম ইন্সটিটিউটের রূপাতলী শাখায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সসহ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পর্কিত নানা কোর্স ইন্সটিটিউটে পড়ানো হয়। আমি ম্যাটস বিভাগের শিক্ষক ছিলাম। ২০১৮ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেই। তবে করোনাকালে মার্চ মাসে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অনলাইনে ৮-১০টি ক্লাস নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এর মধ্যে মো. ইমন ও তার স্ত্রী মনিরা ছিল। তারা ক্লাস ফাঁকি ও লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিল। তাদের লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করে উল্টো পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে নানা সময় তাদের বহিরাগত বন্ধুদের দিয়ে চাপ দিয়ে আসছিল। পাশাপাশি ইমন আমাকে কখনও সালাম দিত না। এ নিয়ে ইন্সটিটিউটের কয়েকজন ছাত্র ইমনকে ভর্ৎসনা করেছিল। তবে সালাম না দেয়া নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। তারপরও ইমন আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

সজল বলেন, এসব কারণে ২৬ আগস্ট হাতেম আলী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ইমন ও তার ৬-৭ জন বন্ধু আমার পথরোধ করে। এরপর তারা আমার মুঠোফোন ও মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে তারা জোর করে অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর আমাকে সেখান থেকে গোরস্থান রোডে নিয়ে মারধর করে তারা। এই সময় ইমনের সঙ্গে ৬-৭ জন যুবক ছিল। একজনের হাতে লাঠি ছিল। তাদের কিল-ঘুষিতে আমার নাক ফেটে যায়। মারধরের একপর্যায়ে ইমন আমাকে কান ধরে ওঠবস করায়। এরপর ইমন আমাকে কিছু কথা বলতে বাধ্য করে। সেগুলো একজন মোবাইল ফোনে ধারণ করে।

জমজম ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক বলেন, আমাদের সাবেক এই শিক্ষককে নগরীর কোনো একটি জায়গায় তুলে নিয়ে কয়েকজন ছাত্র তাকে নির্যাতন করে এবং কান ধরে ওঠবস করা হয়। ঘটনাটি এক মাস পূর্বে ঘটলেও ৪-৫ দিন আগে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এরপর শিক্ষক সজলের সঙ্গে কথা বললে জানান তিনি নির্দোষ। তবে আমার যেটা ধারণা, শুধু শুধু তো এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। শিক্ষক ও ছাত্রদের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ধরেই এই ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষার্থী মো. ইমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে ইমনের ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর না পাওয়ায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ইমনের এক সহপাঠী বলেন, ইমন আমাকে বলেছে তার স্ত্রী মনিরাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওই স্যার। কুয়াকাটায় রাত কাটালে নাকি ভালো নম্বর দেবেন বলেছেন। তবে বিষয়টি সত্য না মিথ্যা তা বলতে পারব না। ইমন এবং তার স্ত্রী ভালো জানেন। পরে শুনেছি স্যারকে কান ধরে ওঠ-বস করিয়েছে ইমন।

জমজম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক বলেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। ভিডিওতে যে শিক্ষককে দেখা গেছে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দুই বছর আগে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। তবে করোনাকালে গত মার্চে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অনলাইনে ৮-১০টি ক্লাস নিয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ করেনি। অথচ ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হচ্ছে। কারা করাচ্ছে, কেন করাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না।

সাজ্জাদুল হক আরও বলেন, ওই শিক্ষক যখন জমজম ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন তখনকার শিক্ষার্থীরা পাস করে অন্যত্র চলে গেছে। ওই শিক্ষকও এখন প্রতিষ্ঠানে নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে জমজম ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই।

আগামীনিউজ/মিথুন

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে