Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পাঁচ কোটি টাকায় হাটের ডাক নিয়ে বিপাকে ইজারাদার


আগামী নিউজ | মো. মনির হোসেন প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২০, ০৪:৫৫ পিএম
পাঁচ কোটি টাকায় হাটের ডাক নিয়ে বিপাকে  ইজারাদার

করোনা ভাইরাস সর্বশান্ত করে দিয়েছে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পশুর হাট যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল হাটের ইজারাদারসহ জড়িত কয়েকশ' মানুষকে। করোনা ভাইরাসের আগে প্রতি হাটে ৫ হাজার পশু কেনাবেচা হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ থেকে দুইশতে। প্রায় পাঁচ কোটি (চার কোটি ৯০ লাখ) টাকা বিনিয়োগ করে হাট ইজারা নিয়ে এখন ভয়ানক আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছেন নাজমুল হাসান।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে তিন মাস বন্ধ থাকার পর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে পশু হাট খোলা রাখলেও ক্রেতা-বিক্রেতার অভাবে এখন লগ্নির টাকা কীভাবে পাবেন- এই চিন্তায় দিশেহারা ইজারাদার। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হাটের ইজারা মূল্য ৬০ শতাংশ কমিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন তিনি।

নাজমুল হাসান বলেন, করোনা ভাইরাস আমাদেরকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। আগে প্রতি হাটে অন্তত ৫ হাজার পশু বেচাকেনা হলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে দুইশতে। প্রতি হাটের খরচ খরচা ৫০ হাজার টাকা ধরে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় হলে বছর শেষে হাট ডাকের (ইজারার) মূল টাকা তোলা সম্ভব। অথচ গত দু'সপ্তায় চারটি হাটে উঠেছে যথাক্রমে ৩৮ হাজার টাকা, ৫৯ হাজার টাকা, এক লাখ টাকা ও এক লাখ ১৮ হাজার টাকা। মোট তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা আদায় হয়েছে।

তিনি বলেন, দশ বছর ধরে গরু হাট চালাচ্ছি এরকম অবস্থায় কখনো পড়িনি। দুই ঈদের আগে একমাস ধরে হাটে সর্বোচ্চ বেচাকেনা হয়। একটা ঈদ গেল, করোনায় তখন হাট বন্ধ ছিল। আর এখন হাটে ক্রেতা বিক্রেতা নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার কোনো গতি নেই।

ক্রেতা না থাকায় হাটে গরু তুলছেন না খামারিরাও

জানা গেছে  যশোর জেলা শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে বাগআঁচড়া সাতমাইল হাট।সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এই দুইদিন এ হাট বসে। করোনার থাবায় এখন হাটটি পশুশূন্য প্রায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এই হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকায়।
যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে বিক্রির জন্য পশু আনা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বেপারীরা এই হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যান।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় হাট বন্ধ ছিল তাই কয়েক হাজার পশু ব্যবসায়ীসহ এই হাটের ওপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ, কেনা-বেচার পাশ লেখক এবং স্বেচ্ছাসেবকরা পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ইদানিং হাট চালু করা হলেও ক্রেতা-বিক্রেতার অভাবে জমজমাট হচ্ছে না।

পশুহাটে কথা হয় চট্টগ্রামের ব্যাপারি মফিজুর রহমান ও সিলেটের আবু তাহেরের সাথে। মফিজুর প্রতিহাটে অন্তত পাঁচ ট্রাক গরু কিনলেও মঙ্গলবার তিনি মাত্র এক ট্রাক গরু কিনেছেন বলে জানালেন। করোনার কারণে এবার বিভিন্ন এলাকায় পশুর চাহিদা কম। দামও তুলনামূলক অনেক কম। তবে পরিবহন খরচটা আগের চাইতে বেশি।
অপর ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, ব্যবসায় এখন ভাটা চলছে। গরু কিনে হাটে নিয়ে বিক্রি করতি না পারলে পুঁজি হারাতে হবে, তাই সাহস করে গরু কিনতে পারছি না।
সামটা গ্রামের মাছুম বিল্লাহ গরু তাজা মোটাকরণ খামার করে এখন বেকায়দায় পড়েছেন। ঈদুল ফিতরের সময় তার ১২টা গরুর মধ্যে অন্তত ১০টা বিক্রির আশা ছিল। করোনায় হাট বন্ধ ছিল তাই একটিও বিক্রি করতে পারেনি।

বেচা-বিক্রি না থাকায় এভাবেই অলস সময় পার করছেন হাট সংশ্লিষ্টরা

মাছুম বলেন, গরু নিয়ে পড়িছি মহাবিপদে। এখন হাটে নিয়ে আইছি। ব্যাপারি আসছে না তাই গরুও বিক্রি করতে পারছেন না। ব্যবসার সব টাকা গরুর খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন পশুখাদ্য কিনতে যেয়ে হিমসিম খাচ্ছি।

হাট কমিটির সদস্য আবু তালেব বলেন, এখানে গরু বেচাবিক্রি নেই। বাইরের পার্টি না আসলে কেনবে কে? ব্যাপারি না আসায় অনেকে টাকা খরচ করে গরু হাটে আনছে না। দায় ঠেকে কিছু খামারি হাটে গরু আনছে, কিন্তু দাম পাচ্ছে না বলে ছাড়ছে না। তবে ঈদ আসার আগে কিছু গরু হাটে উঠবে বলে জানান অনেকে।

হাটে হাটে পশু বেচা-কেনায় সম্পৃক্ত পশু ব্যবসায়ী সাতমাইলের মন্টু মিয়া, আনসার আলী ও সোহরাব হোসেন জানান, তারা এক হাট থেকে পশু কিনে অন্য অন্য হাটে বিক্রি করেন। হঠাৎ করেই হাট বন্ধের পর আগেই কেনা পশু নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন তারা। এগুলো বিক্রি করতে পারছেন না।

সোহরাব হোসেন বলেন, করোনায় নিজের সংসারের খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে যেখানে হিমসিম খাচ্ছি, সেখানে পশুখাদ্য কিনব কীভাবে? ওদের খাবার না দিতে পারলে আবার দামও পাওয়া যাবে না। পড়িছি উভয় সংকটে। করোনার ভয়ে হাটে ব্যাপারি আসছে না, তাই বেচাবিক্রি নেই।

হাট কমিটির সহ-সভাপতি ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস বলেন, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ অন্তত ২০ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারিরা আসেন এ হাটে। করোনায় তিন মাস ধরে হাট বন্ধ, এখন খোলা থাকলেও হাটে নামমাত্র পশু উঠছে, বেচাকেনা নেই, পুঁজিও হারিয়ে যাচ্ছে। হাটের খরচের টাকা দিয়ে যা পাচ্ছি তাতে কয়েক বছরেও লগ্নিকরা টাকা তোলা সম্ভব নয়।

নামমাত্র গরু-ছাগল আসছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম এই পশুরহাটে

হাট কমিটির সভাপতি বাগআঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, ব্যবসায়ীরা সব ধরনের নিরাপত্তা পায় বলেই হাটটি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এলাকার তিন হাজার উপকারভোগী হাটের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ব্যবসায়ীদের থাকা খাওয়াসহ নিরাপত্তা, পশুখাদ্য সরবরাহ, ট্রাক বন্দোবস্ত ও হাটের শৃখংলা রক্ষার কাজে জড়িয়ে থাকার মাধ্যমে এদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। কিন্ত তিন মাস তারা কর্মহীন। মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

হাটের শুরু হয় বৈশাখ মাসে আর শেষ হয় চৈত্র মাসে। প্রতি বছর ১০০টি হাট পাওয়া যায়। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় তিনটি মাস শেষ হচ্ছে। আয় হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। সপ্তায় ১০ লাখ টাকা আয় হলে তবে আসল টাকা তোলা সম্ভব। করোনার কারণে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে এখন সবাই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সরকারি সহযোগিতা না পেলে হাটের সাথে যুক্তদের পথে বসতে হবে। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল বলেন, ওনাদের আবেদন পেয়েছি, কিন্তু আমাদের তো বিবেচনার সুযোগ নেই। এটা হাট ইজারা কমিটির ব্যাপার। আবেদনটা সংশ্লিস্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে সরকার বিবেচনা করলে আমরা সেটার বাস্তবায়ন করবো। ওনাদের লস হচ্ছে সেটা তো আমরা বুঝছি। তবে দেশ করোনা বিপদমুক্ত হলে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত সব সেক্টরের পাশে দাঁড়াবে সরকার।

আগামীনিউজ/মো. মনির হোসেন/এমজামান

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে