ম্যারাডোনার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

খেলাধুলা ডেস্ক নভেম্বর ২৫, ২০২১, ১১:১৪ এএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা কেবল একটি নাম নয়, একটা আবেগের নাম। কিংবদন্তি, নায়ক, ইতিহাসের অন্যতম মহান ফুটবলার— কোনো বিশেষণই তার জন্য যথেষ্ট নয়। ছোট আকৃতির মানুষটি বিশ্ব ফুটবলে হয়েছিলেন অনেক বড় তারকা। উল্কার গতিতে যেন তার জীবনের ৬০টি বছর পেরিয়ে গেলো। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর বুয়েন্স এইরেসে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কিংবদন্তির প্রস্থানের আজ এক বছর পূর্ণ হলো। তার মতো কিংবদন্তিদের তো মৃত্যু হয় না। কেবল দেহাবসান ঘটেছে। ফুটবলে, ফুটবল মাঠে ও মাঠেই বাইরে তিনি যা করে গেছেন, তা যুগের পর যুগ মানুষ মনে রাখবে। ফুটবলের ব্যাড বয়কে মানুষ আবেগে ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।

১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এইরেসের তার জন্ম। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন। কিন্তু সেগুলো তার খেলার প্রতিভায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। ফুটবল প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি বুয়েন্সে এইরেসের নামকরা ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে নাম লেখান। সেখানেই মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার অভিষেক হয় সিনিয়র দলে। অভিষেকের বছরই আর্জেন্টিনোস শিরোপা জিতে। ম্যারাডোনার নাম-ডাক চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে সুযোগ পান তিনি। দুই বছর পর জাপানে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেন অধিনায়ক হিসেবে।

অসাধারণ সব ড্রিবল, ধ্রুপদী শট, মুগ্ধতা ছড়ানো বল পায়ের নিখুঁত রসায়নে ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেন অনন্য, অসাধারণ, অভাবনীয়।

এরপরই আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব বোকা জুনিয়র্স তাকে দলে ভেড়ায়। ১৯৮২ সালে নীল-সাদা জার্সিধারীদের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেন তিনি। তার ফুটবল প্রতিভার ঝলক দেখে বিশ্ব। সেই ঝলক নজর এড়ায়নি স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার। তারা চুক্তিবদ্ধ করে ম্যারাডোনাকে।

দুই বছর পর বার্সেলোনা থেকে রেকর্ড ৪০.৬৮ লাখ পাউন্ডে নাপোলিতে যোগ দেন তিনি।

১৯৮৬ সালটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয়। বলা হয়ে থাকে ফুটবল ইতিহাসের এই বছরটি তিনি একেবারে নিজের করে নিয়েছিলেন। ৮৬ বিশ্বকাপে তিনি শুরু থেকেই দারুণ করছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে কিংবদন্তির কাতারে চলে যান তিনি। অবশ্য ওই ম্যাচে ‘হ্যান্ড অব গড’ এর বিতর্কিত ও ঐশ্বরিক গোলটিও করেন তিনি। আরও একটি গোল করে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যান সেমিফাইনালে। এরপর সেমিফাইনালে দুটি গোল করে ফাইনালে তোলেন দলকে।

লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে দলকে ফাইনালে তোলা ম্যারাডোনা শিরোপার লড়াইয়ের মঞ্চেও রাখেন সাফল্যের ছাপ। ৮০ মিনিটে পশ্চিম জার্মানি দ্বিতীয় গোল করে সমতা ফেরানোর তিন মিনিট পর ম্যারাডোনার লেজার গতির থ্রু পাস ধরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী গোলটি করেন হোর্হে বুরুশাগা।

পরিসংখ্যানও প্রমাণ দেয় যে ওই আসরটি ছিল ‘ওয়ান ম্যান শো’। মেক্সিকোতে আর্জেন্টিনার মোট গোলের ৭১ শতাংশে ম্যারাডোনা অবদান ছিল। অর্থাৎ তিনি হয় গোল করে নয়তো বানিয়ে দিয়ে অবদান রেখেছেন। এই বিশ্বকাপ দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী নায়ক বনে যান।

বিশ্বকাপের পর ম্যারাডোনা তার নাপোলির অধ্যায়কে আরও সমৃদ্ধ করেন। তার পারফরম্যান্সে ভর করে ১৯৮৭ সালে নাপোলি ইতালিয়ান সিরি’আ লিগের শিরোপা জিতে। ১৯৮৯ সালে জিতে মর্যাদাকর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা।

উল্কার গতিতে নায়ক হয়ে ওঠা ম্যারাডোনা এরপর থেকে খলনায়কের পথে হাঁটতে শুরু করেন। বিশেষ করে ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর। এরপর বিতর্ক আর পিছু ছাড়েনি তার। মাদক কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে দুই বছর তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়। এই মাদক কাণ্ডে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকেও নির্বাসিত হন তিনি। ওই বিশ্বকাপেই গ্রিসের বিপক্ষে শেষবারের মতো আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলেন। এরপর ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে দেশে ফেরেন। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল করা ম্যারাডোনার আর জাতীয় দলে খেলা হয়নি। ১৯৯৭ সালে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে খেলতে খেলতে ৩৭ বছর বয়সে ফুটবলকে বিদায় জানান তিনি। সে সময় তার নামের পাশে লেখা ছিল ৬৭৮ ম্যাচে ৩৪৫ গোলের রেকর্ড।

অবসরের পর কোচও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফুটবলার হিসেবে তিনি যতোটা সফল ছিলেন কোচ হিসেবে তার ধারে-কাছেও যেতে পারেননি।

ব্রাজিলের পেলে নাকি আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা— কে সেরা? এটা নিয়ে অবশ্য বিশ্বব্যাপী অনেক বিতর্ক ছিল। কিন্তু ২০০০ সালে সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে পেলের সঙ্গে যৌথভাবে শতাব্দীর সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন ম্যারাডোনা।

একই বছর অত্যধিক মাদক সেবনের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই হৃদরোগ আর পিছু ছাড়েনি তার। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই পরপারে পাড়ি জমান কিংবদন্তি দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা।

আগামীনিউজ/নাসির