লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৯৪

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ  জানুয়ারি ১৬, ২০২০, ০৮:৩৬ এএম

সোনার মানুষ ঝলক দেয় দ্বিদলে।
যেমন মেঘেতে বিজলী খেলে॥
দেল নিরূপণ হয় যদি
জানা যায় সেরূপ নিধি
মানুষের করণ হবে সিদ্ধি
সেইরূপ দেখিলে॥
গুরু কৃপার তুল্য যারা
নয়ন তাদের দীপ্তকারা
রূপে আশ্রিত হয়ে তারা
ভবপারে যায় চলে॥
স্বরূপ রূপে রূপের গমন
স্বর্গমর্ত্য পাতালভুবন
সিরাজ সাঁই কয় অবোধ লালন
চেয়ে দেখ নয়নে॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা : প্রত্যেকের নিজের মধ্যেই সোনার মানুষ তথা প্রজ্ঞা নিহিত আছে। মেঘের মধ্যেই যেমন বিদ্যুৎ চমকায় তেমনি প্রত্যেকের নিজের মধ্যেই তার প্রয়োজনীয় মুক্তির জ্ঞান রয়ে গেছে। তাই পৃথিবীর সকল প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিই তার সাধনার শক্তির দ্বারা নিজের মধ্যকার সম্পদ অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকেন। প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি তার প্রজ্ঞার দ্বারা নিজের মধ্যে যে সাঁই বিরাজ করেন তার আদি অন্ত নিরূপণ করেন। আর এই কর্ম যে সিদ্ধি করতে পারে তার সাধনারও সিদ্ধি ঘটবে এবং সে প্রকৃত প্রজ্ঞাবান হবেন।

যারা তার নিষ্ঠার গুণে গুরুর কৃপা অর্জন করেন এবং গুরুর নির্দেশনা মোতাবেক নিজের মধ্যকার সমস্ত বস্তু কর্মের ওপর সাধনার শক্তির দ্বারা অবলোকন করেন তারা প্রকৃত পক্ষে সেই মহাসত্যের স্বরূপ নিজের চোখে সর্বদা অবলোকন করেন।

মানুষের এই দেহ মনের মধ্যেই স্বর্গ-মর্ত-পাতালসহ সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড বিরাজ করে। যে তার নিজের দেহ মনের ওপর বিজয় অর্জন করতে পারে প্রকৃতপক্ষে সে-ই বিশ্ব বিজয় অর্জন করেছেন। তার কারণ এই বিশ্বময় জগতে যা কিছু রহস্য আছে তার সবকিছুই বিরাজ করে নিজের দেহ-মনের মধ্যে। তাই নিজেকে চেনার অর্থই হচ্ছে বিধাতাকে চেনা বা বিশ্বকে চেনা।

১০-০৬-২০১৭ 

রাতঃ ৮:৫৫