লালনগীতির প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যা-৫১

সাঁঈজি সিরাজ সাঁঈ অক্টোবর ২৩, ২০১৯, ০৯:২৬ পিএম

জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি সব দেখি তা না না না।
যখন তুমি ভবে এলে
তখন তুমি কী জাত ছিলে
যাবার বেলায় কী জাত নিলে
এ-কথা আমায় বল না।
ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল চামার-মুচি
একই জলে সব হয়গো শুচি
দেখে শুনে হয় না রুচি
যমে তো কাউকে ছাড়বে না।
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়
লালন বলে জাত কারে কয়
এই ভ্রম তো গেল না॥

প্রজ্ঞাময় ব্যাখ্যাঃ

মানুষ নিজেদের চিন্তা-চেতনা এবং সামাজিক কারণে বিভিন্ন ধর্মের সৃষ্টি করেছে। মানুষের মনের মধ্যেও বিভিন্ন ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান স্থায়ীভাবে গেড়ে গেছে। মানুষ ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে মূল্যায়ন করে। সে যে বিশ্বাস নিজের মধ্যে স্থায়ী করে রেখেছে সেই বিশ্বাস বা আচার অনুষ্ঠানের বাইরে সে কিছুই গ্রহণ করতে পারে না। 

মানুষের মন সবসময় বস্তু নির্ভর। এ সমাজের যে সব আচার-অনুষ্ঠান আমরা অবলোকন করি তা সবই বস্তু ভিত্তিক। কেবলমাত্র বস্তু আচার-অনুষ্ঠানের পার্থক্যের কারণে আমরা একে অপরকে মূল্যায়ন করি। কিন্তু মনজগতের প্রজ্ঞার দ্বারা বিচার বিশ্লেষণ করি না। পৃথিবীর যে সব প্রাকৃতিক গুণাবলী বা বস্তু আছে তার মধ্যে কোন ধর্মের ভেদাভেদ লক্ষ্য করা যায় না। পানি যেমন ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল, চামার-মুচি সকল কেই পবিত্র করে। ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যে সাধনার দ্বারা যখন প্রজ্ঞার সৃষ্টি হয় তখন তার মধ্যে আর এই সামাজিক-ধর্মীয় পার্থক্য থাকে না। সে প্রজ্ঞার দ্বারা নিজেকে পরিচালিত করতে থাকে। 

গোপনে যেমন বেশ্যার বাড়ীতে ভাত খেলে ধর্মের কোন ক্ষতি হয় না। তেমনি এসব সামাজিক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রকৃত সত্য নিহিত নেই। বরং যে প্রজ্ঞাবান সত্ত্বা সাধনার শক্তি দ্বারা নিজেকে পরিচালিত করতে পারে তার মধ্যে আর এই সামাজিক ধর্মীয় তা-না-না ভাব থাকে না।

৩০-০৫-২০১৭

বিকালঃ ৫:১৫