ইসলামে জঙ্গিবাদের ঠাই নাই 

সোহেল মুন্সী জানুয়ারি ২১, ২০২১, ০৪:২৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস ও ত্রাস সৃষ্টি যেকোনো ধর্ম, মতাদর্শ ও সভ্যতাবিরোধী।,সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়েছে ধর্মহীনতা থেকে। খুনাখুনি ও রক্তপাত কেউ পছন্দ করে না। এর পরও হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ও ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য আদর্শের উগ্র উন্মাদনায় মেতে ওঠে। পার্থিব-অপার্থিব কল্যাণের অলীক আশায় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে।সন্ত্রাসের করাল গ্রাসে গোটা মানবজাতি জর্জরিত।

প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। তাদের ধর্ম সন্ত্রাস। সারা বিশ্বেই খুন-খারাবি হচ্ছে। ইসলাম গ্রহণের কারণে নয়, পূর্ণ ইসলাম না থাকার কারণেই মানুষ সন্ত্রাসী হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)

যতোদিন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করা না যাবে, ততোদিন পর্যন্ত সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না। ইসলাম হলো শান্তি, উদার, অসাম্প্রদায়িক ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।ইসলাম কখনোই হত্যা, নৈরাজ্য সৃষ্টি, সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না। 

পৃথিবীতে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে নিষেধ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হইও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করে না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ফিতনা (দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধ) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯১)

বর্তমানে ইসলামের নামে যারা উগ্র সন্ত্রাসী কাজ করছে, তারা দ্বীন-ইসলামের কোনো উপকার তো করছেনই না, বরং প্রচণ্ড ক্ষতি করছেন। তাদের এহেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দ্বীন-ইসলামের সহীহ দাওয়াত ও তাবলীগই আজ হুমকীর সম্মুখীন। প্রকৃতপক্ষে এরা মুসলিম জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনছেন।

কুরআন ও সুন্নাহ্‌র এই নির্দেশনা অনুসরণ করে চললে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কখনোই মুসলিম সমাজে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারতো না।

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস অনুযায়ী এই জামানার সন্ত্রাসীরা হবে অপরিপক্ক ও নির্বোধ। ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রাযিআল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীসে নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-"শেষ জামানায় এমন একটি গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে বয়সে নবীন, বুদ্ধিতে অপরিপক্ক ও নির্বোধ। তারা পবিত্র কুরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালীও অতিক্রম করবে না (অর্থাৎ অন্তরকে স্পর্শ করবে না)। তারা সৃষ্টির সেরা মানুষের কথাই বলবে কিন্তু দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন ধনুক থেকে তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়।" (তিরমিযী হা: ২১৮৮, কিতাবুল বাব অনুচ্ছেদ: ২৪)

ইসলামের নামে সন্ত্রাস করে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা দ্বীনকে সমুন্নত করছে না, বরং ক্ষতি করছে। তাদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের দ্বারা গোটা বিশ্বে এখন ইসলামের শান্তিপ্রিয় দিকটি চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। সর্বোপরি যা সমাজে ধ্বংস ও বিপর্যয় ডেকে আনে তা কখনো একজন প্রকৃত মুসলিমের বা ইসলামের কাজ হতে পারে না। 

৪ঠা জুলাই ২০১৬ পবিত্র রমজানের রাতে মদীনার মসজিদে নববীর পাশে একটি চক্র আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। সেদিন হামলাকারীসহ ৬ জন নিহত হয়, তখন ২০ লাখ মুসল্লী মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলেন। ২৪ ঘণ্টায় তারা সৌদি আরবে ৩টি হামলা চালায় ।   একই বছর ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়   উগ্র সন্ত্রাসীরা দেশি-বিদেশি ২২ জন নিরপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লেবাসধারী ভ্রান্ত আকিদার মুনাফিক চক্র বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষদেরকে আজ তাদের কবলে জিম্মি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।

অন্য দিকে "পৃথিবীতে তথাকথিত মুসলিম জঙ্গির সংখ্যা কতো? ইন্টারনেট ঘেটে দেখলাম এনিয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য উপাত্ত নেই। তবে বেশ কিছু আর্টিকেল পেলাম। একটি আর্টিকেলে দাবী করা হয়েছে সংখ্যাটি ১ লাখ ৮৪ হাজার হতে পারে। আমি এটাকে ১০০ গুণ বাড়িয়ে ১ কোটি ৮৪ লাখও যদি ধরি তবে সংখ্যাটি বিশ্বের মোট মুসলমানের সংখ্যার ১ শতাংশ। কিন্তু আসলে তো এতো নয়। হয়তো সংখ্যাটি ১ লাখেরও কম। তবে যেভাবেই ধরি না কেন ১৮০ কোটি মুসলমানের মধ্যে সংখ্যাটি অনুল্লেখযোগ্য। হাতে গোনা এই অপরাধীদের জন্য ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের হেয় করে কথাবার্তা বলা কি ঠিক? ইসলামকেই জঙ্গিবাদী বলা কি ঠিক? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, পশ্চিমা মিডিয়া এমনভাবে সারা বিশ্বে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে যে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া মানুষেরা বিশ্বাস করে যে সকল মুসলমান জঙ্গি না হলেও সকল জঙ্গিই মুসলমান। তার মানে কি ৭০০ কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে অন্য কোন ধর্মাবলম্বীরা অপরাধ করে না। জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত নয়? সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত নয়? তাদের মধ্যে উগ্রবাদীরা নেই। মুক্ত জ্ঞানের ভান্ডার উইকিপিডিয়া সার্চ দিলে দেখা যায় সকল ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আছে। গুগল সার্চেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়।" 

একজন জঙ্গির নিজের ধর্ম বিশ্বাস থাকতে পারে। আবার নাও পারে। জঙ্গি হিন্দু হতে পারে, মুসলমান হতে পারে, খৃষ্টান হতে পারে, বৌদ্ধ হতে পারে কিংবা অন্য কোন ধর্মের লোক হতে পারে। এমনকি জঙ্গিরা নাস্তিকও হতে পারে। একজন খুনি, চোর, পিকেটার ইত্যাদি অপরাধীর মতো জঙ্গিও অপরাধী। জঙ্গি হলেই মুসলমান হতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমেরিকায় ৯/১১ এর ঘটনার পর এযাবতকালে আমেরিকাতে সন্ত্রাসী হামলায় ১,৯০,০০০ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে যার মধ্যে আমেরিকান মুসলমানদের (যদিও সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা কখনো মুসলমান হতে পারে না) সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭। কিন্তু এই বিষয়টি কখনোই সেভাবে প্রচারিত হয়নি। বরং সবসময় প্রচার করা হচ্ছে যে, ইসলামি জঙ্গিদের হামলায় মারা গিয়েছে। একজন মুসলমান হিসেবে আমি এই ধরনের চিন্তাভাবনার প্রতিবাদ জানাই। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। যারা জঙ্গি আমি তাদেরকে মুসলমান মনে করি না।  

মানব সভ্যতার সংরক্ষণের জন্য এই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার বিস্তার ব্যপকভাবে করা। কারণ ইসলাম কোনো সহিংসতা বা সন্ত্রাস শিক্ষা দেয় না। মুসলিম নামধারী কিছু মানুষ তার মানবীয় লোভ, দুর্বলতা, অসহায়ত্ব, প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদির কারণে সহিংসতা বা হিংস্রতায় লিপ্ত হয়। এরূপ সহিংসতায় লিপ্ত ব্যক্তি নিজের কর্মের পক্ষে সাফাাই গাওয়ার জন্য, নিজের বিবেককে অপরাধবোধ থেকে মুক্ত করার জন্য, অন্যকে নিজের পক্ষে টানার জন্য এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করে।


আগামীনিউজ/সোহেল