২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৯৫১

আগামী নিউজ প্রতিবেদক জানুয়ারি ২, ২০২৩, ১২:৩৬ পিএম

ঢাকাঃ বিদায়ী ২০২২ সালে সারাদেশে ছয় হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নয় হাজার ৯৫১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৩৫৬ জন। একই সময় রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত, ২০১ জন আহত হন। নৌ-পথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত, ৩৫৭ জন আহত এবং ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৭৬১৭ টি দুর্ঘটনায় ১০ হাজার ৮৫৮ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন।

আগের বছরের চেয়ে এই বছর সড়কে দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি ২৭.৪ শতাংশ বেড়েছে। গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে গেল বছর।

সোমবার (২ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২২ প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা গেছে, বিদায়ী ২০২২ সালে ছয় হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নয় হাজার ৯৫১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৩৫৬ জন।

নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার সরকারি আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে বিগত আট বছরের মধ্যে বিদায়ী ২০২২ সালে সড়কে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানায় সংস্থাটি।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত তিন হাজার ৯০ জন চালক, এক হাজার ৫০৩ জন পথচারী, ৭৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক, ২৮৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এক হাজার ১৫০ জন নারী, ৭৯৪ জন শিশু, ৪৪ জন সাংবাদিক, ৩১ জন চিকিৎসক, ১৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পাঁচজন শিল্পী, নয়জন আইনজীবী ও ২৯ জন প্রকৌশলী এবং ১৬৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

নিহত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১১৪ জন সদস্যের মধ্যে ২৭ জন সেনা সদস্য, ৬২ জন পুলিশ সদস্য, নয়জন বিজিবি সদস্য, পাঁচজন নৌ-বাহিনীর সদস্য, আটজন আনসার সদস্য, দুইজন ডিজিএফআই সদস্য, একজন বিমানবাহিনীর সদস্য, একজন সিআইডি, একজন এনএসআই সদস্য, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২৪ জন সাংবাদিক, ৭০৩ জন নারী, ৫৮৮ জন শিশু, ৬৬৬ জন শিক্ষার্থী, ১১৭ জন শিক্ষক, ২৩৮৩ জন চালক, ৪২১ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৭ জন প্রকৌশলী, নয়জন আইনজীবী, ১৩৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩১ জন চিকিৎসক।

এ সময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট এক হাজার ৬১৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। যার ১৩.৯৫ শতাংশ বাস, ২৪.৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৬.৯৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৬.২২ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৮.৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১.৪২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮.৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫২.৫৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২১.৬১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮.৬৩ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৪০ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং ০.৯৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত ২০২১ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০২২ সালে ১.৫২ শতাংশ গাড়িচাপা, ০.৫৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ০.১৩ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে, ০.৩৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা কমেছে। ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ০.১২ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘটিত যানবাহনের ৩১৯ শতাংশ বাস, ৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২.৭৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক, ২.৫১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ০.৭৮ শতাংশ কার জিপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় বেড়েছে। এছাড়া ৫.৯২ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১.৩২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৭.৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১১.৮৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.৬৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৭১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ০.৯৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

গত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে ছোট যানবাহনের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া ও এসব যানবাহন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে আঞ্চলিক মহাসড়কে ১২.৭৩ শতাংশ, জাতীয় মহাসড়কে ৩.৮১ শতাংশ, রেলক্রসিং-এ ০.১৬ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ফিডার রোডে ৮.৪৬ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।

২০২২ সালে,সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয়েছে ১৫ জুলাই, এই দিনে ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ০৬ সেপ্টেম্বর, এই দিনে ০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ২৯ জুলাই, এই দিনে ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ১১ জুলাই, এই দিনে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ১২৪ জন আহত হয়েছেন।

বুইউ