দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বইমেলাতে বই

আগামী নিউজ প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০, ০২:৪০ পিএম

তারা চর্মচক্ষু দিয়ে দেখেন না ঠিকই কিন্তু অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখেন। দেখেন স্পর্শে আর অনুভবে। আমরা বলি দু’চোখে বিশ্ব দেখো। সবার পক্ষে ঘুরে ঘুরে বিশ্ব দেখা অসম্ভব। যাদের চোখ নেই তারা কী তবে বঞ্চিত হবেন বই পড়া থেকে? বিশ্ব দেখা থেকে?

একুশে গ্রন্থমেলা প্রায় শেষ হতে চলল। মেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বই পড়ার সুযোগ করে দিতে এগিয়ে এসেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী। তারা ব্রেইল পদ্ধতিতে বই প্রকাশ করেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে পাতাজুড়ে ছয়টি বিন্দুর বিভিন্ন সংকেত থাকে। ঘর আকৃতির সংকেতগুলোয় হাত বুলিয়েই অক্ষরগুলো বোঝা যায়। সেই বিন্দু স্পর্শ করেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা পড়ে যান পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। এই দৃশ্য মুগ্ধ নয়নে দেখছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।

প্রকাশক ও লেখিকা নাজিয়া জাবীনসহ স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টলের সহযোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেল বই বিক্রি নয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যেন পড়তে পারে, সে তথ্য জানাতেই মেলায় স্টল নিয়েছেন স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী। এখানে যেমন জাতীয় জাদুঘর সম্পর্কে জানা যাবে, তেমনি পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এ বছর বইমেলায় ১৪টি বই ব্রেইল আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে এই প্রকাশনা সংস্থাটি ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করে আসছে।

স্টলের দায়িত্বে থাকা মো. শাহরিয়ার কবির তৌফিক বলেন, ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ‘দৃষ্টিজয়ী’ বলে। কারণ একমাত্র স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা তাদের পড়াশোনার জন্য বই প্রকাশ করে। বই প্রকাশ করার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতেও আমরা কাজ করি।’

চার বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারান সারওয়াত হোসেন বুশরা। বর্তমানে তিনি স্পর্শ ব্রেইল বইয়ের সহযোগিতায় রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করছেন। বুশরা  বলেন, স্পর্শ ব্রেইল আমাদের বিনামূল্যে বই দেয়। ব্রেইল পদ্ধতির বই প্রকাশিত হবার কারণে নিজেই পড়তে পারি। অন্যের সাহায্য লাগে না।

টার্কিশ হোপ স্কুলের শিক্ষিকা সামিরা সাদিক বলেন, মেলায় ব্রেইল পদ্ধতির বইগুলো বিশেষ করে দৃষ্টিজয়ীদের জন্যই তৈরি। স্পর্শ ব্রেইলের প্রধান উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বলেন, বইমেলায় শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক দৃষ্টিজয়ীরা আসছেন ব্রেইলে প্রকাশিত বই দেখা ও পড়ার জন্য। ব্রেইল পদ্ধতিতে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠায় আমাদের খরচ হয় দশ টাকা।

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে নাজিয়া আরো বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্পর্শ ব্রেইল অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এ বছর আমরা ইংরেজিতেও বই প্রকাশ করেছি। আগামীতে আমরা আরো বড় পরিসরে কাজ করতে চাই।

আগামীনিউজ/হাসি