কারারক্ষী নিয়োগে উত্তরাঞ্চলের দালালরাই সফল!

নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩, ২০২১, ০৮:০১ পিএম
ফাইল ফটো

রাজশাহীঃ “এখন তো আশা করা যাচ্ছে যে, কাজটা হবে। এ্যাপোয়েনমেন্ট লেটার দেয়ার পরেই নিবে ওরা টাকা নাকি? হ্যা, বা তার আগেও নিবে। আগে কত নিবে? আগে ফিফটি পরে ফিফটি। আগে টাকা নেয়া এটা কেমন? এখন নিবে তাই তো বলছে। সবাই তো বলছে কাজ হয়ে গেছে। টোটাল কত হয়েছে বলো তো, টোটাল কত আর কত ল্যাকিং থাকছে? টোটাল এ্যামাউন্ট হচ্ছে ভাইয়া পনেরো।

মানে পনেরো লাখ? ওই মাধ্যমের সাথে তোমাদের চুক্তি ১৫ লাখ? হ্যা। এখন তোমাদের কত জুটানো যাচ্ছে আর কত ঘাটতি থাকছে? এখন আমাদের বলতে ধরেন আটের মতো। ৮ না ১০? আট। বাকি থাকছে ৭ লাখ? হ্যা” কারারক্ষী পদে নিয়োগ প্রসঙ্গে এক চাকরীপ্রার্থীর সঙ্গে আগামী নিউজের ফোনালাপের কথোপকথন এটি।

ওই চাকরীপ্রার্থীর নাম মো. সজন হোসেন। তিনি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিনগর এলাকার সেলিম হোসেনের ছেলে। চাকরীর আবেদনে তার বিডিজেএম নম্বর ১১০৩৮৮। একটি দালাল চক্রের সঙ্গে চাকরীর বিষয়ে ১৫ লক্ষ টাকা লেনদেনের চুক্তি হয় সজনের। চুক্তি অনুযায়ী, এ্যাপোয়েনমেন্ট লেটার পাওয়ার পূর্বেই দিয়েছেন অর্ধেক তথা সাড়ে ৭ লাখ টাকা। আর বাকি ৭ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল নিয়োগপত্র পাওয়ার পর। সেটিও দিয়েছেন, লিখিত, মৌখিক, প্রাথমিক সুপারিশ এবং পরে চূড়ান্ত সুপারিশের পর সবশেষ হাতে পেয়েছেন নিয়োগপত্র। মৌখিক পরীক্ষায় শুধু নিজের নাম ও পিতার নাম বলেই উত্তীর্ণ হয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তর দেননি সকল প্রশ্নের। তবুও এগিয়েছেন এতদূর। সহায়তায় ছিল দালাল চক্র।

সজন হোসেন জানান, দীর্ঘদিন থেকে ওই দালাল চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এভাবে বিভিন্নজনকে চাকরী পাইয়ে দিচ্ছে। ওই চক্রের একজন সদস্যের এক ‘বড়ভাই’ কারা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত এবং তার সঙ্গে যোগসাজসের পর কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই বেশিরভাগ নিয়োগ হয়। ওই চক্রের একটি অংশ বগুড়ার বাসিন্দা। তারা পুরো উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদেরকে সাপোর্ট দেন সেই ‘বড়ভাই’। ফলে তিনিও চুক্তি করেন ১৫ লাখ টাকার। কথামতো পেরিয়ে যান পরীক্ষার সকল ধাপ। পুলিশ ভেরিফিকেশনেও টাকার মাধ্যমে পজিটিভ হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ নভেম্বর একটি নোটিশ প্রকাশ করে কারা অধিদপ্তর। সেখানে কারারক্ষী নিয়োগের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের গত ১৪ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হয়। এরপর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১০৯১ জনকে গত ১৯ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।

মৌখিক পরীক্ষা শেষে এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী অধিদপ্তরের এক সভায় কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী নির্বাচন কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ৫০৫ জনকে নির্বাচিত করা হয় এবং গত ২৮ ফেব্রুয়ারী প্রকাশ করা হয় সেই ফলাফল। সবশেষ গত ২৮ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ওই ৫০৫ জনকে আগামী ১ জুন বিভাগীয় কারা মহাপরিদর্শকের কাছে নিয়োগপত্র ও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যদিও গত রবিবার (২ মে) যাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারনে সেই তারিখ পিছিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, চাকরীর জন্য দালাল চক্রের সঙ্গে চুক্তি করে প্রতারিত হয়েছেন অনেকে। এছাড়া চাকরী দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় সম্প্রতি রাজশাহীতে গোয়েন্দা পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন তথ্য। পুলিশের এসআই পরিচয়ে প্রতারণা করতেন তিনি। তবে ওই দালাল চক্রের অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে কারারক্ষী নিয়োগের ফলে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। দাবি জানিয়েছেন, এদের সকলকে আইনের আওতায় এনে শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার।

এ বিষয়ে কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী নির্বাচন কমিটির সভাপতি এবং অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন বলেন, অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বা অসদুপায় অবলম্বন করে চাকরীতে নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এ সকল কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আগামীনিউজ/এএস