সুদানের রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ খাচ্ছে কুকুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ৯, ২০২৩, ০৪:১৩ পিএম

ঢাকাঃ সুদানে সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘাত থামছেই না। দেশটির রাজধানী খার্তুমের দখল নিয়ে চলা লড়াইয়ের কারণে শহরের বাসিন্দারা এমন এক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন যা তারা আগে কল্পনাও করেননি। শহরের রাস্তায় রাস্তায় যেসব মৃতদেহ পড়ে আছে সেগুলোর ব্যাপারে তারা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

খার্তুমের একজন বাসিন্দা জানান, ‘আমি তিনজনকে তাদের নিজেদের বাড়ির ভেতরে কবর দিয়েছি, আর বাকিদের কবর দিয়েছে আমি যে রাস্তায় থাকি তার প্রবেশ মুখে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা কুকুর কামড়ে কামড়ে মৃতদেহ খাচ্ছে- ঘরের দরজা খুলে এই দৃশ্য দেখার চেয়ে এটা ভালো ব্যবস্থা।’

যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কতো মানুষ মারা গেছে এই হিসাব কেউ জানে না। কিন্তু ধারণা করা হয়, এই সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি যাদের মধ্যে বহু বেসামরিক মানুষও রয়েছে।

সুদানে সামরিক বাহিনীর দু’টো গ্রুপের মধ্যে এই লড়াই চলছে। নিয়মিত সেনাবাহিনী লড়ছে দেশটির র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ নামের একটি আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে।


এই দুই গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফার যুদ্ধবিরতির পরেও রাজধানীর লোকজনের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে কবরস্থানে যাওয়া অনেক বেশি বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কম করে হলেও ২০ জনকে কবর দিয়েছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘আমার এক প্রতিবেশী তার বাড়িতে নিহত হয়েছে। আমি কিছু করতে পারিনি। তবে তার বাড়ির মেঝের সিরামিক টাইলস উঠিয়ে সেখানে একটা কবর খুঁড়ে তাকে মাটি চাপা দিয়েছি।’

‘রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো গরমে পচে যাচ্ছে। আমি কী বলতে পারি? খার্তুমের কিছু কিছু এলাকা এখন কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে।’

তবে খার্তুমের একজন ডাক্তার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অনিরাপদ উপায়ে মৃতদেহ কবর দেওয়ার কারণে অসুখ বিসুখও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, মৃতদেহ যদি খুব বেশি গভীরে চাপা না দেওয়া হয়, তাহলে বেওয়ারিশ কুকুর এগুলো উপরে তুলে ফেলতে পারে। এখানে কবর দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে না। মৃতদেহ যাতে কবর থেকে তোলা না যায় সেজন্য কবরের ভেতরে কঠিন বস্তু অথবা ইট দিতে হবে।’

রেড ক্রসের একজন স্বেচ্ছাসেবী তিনি রাস্তা থেকে মৃতদেহ তুলে নেওয়ার কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি মুখ ও দেহের ছবি তুলি, লোকটি কি খুব সম্প্রতি মারা গেছে নাকি মরদেহটি পচে গেছে সেটা রেকর্ড করে রাখি এবং মৃতদেহটিকে একটি নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করি।’

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে নিহত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায় সেজন্য প্রত্যেকটি মরদেহের ব্যাপারে আলাদা আলাদা ফাইল সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল খার্তুমে সংঘাত শুরু হওয়ার পর আরএসএফ যোদ্ধারা দ্রুত রাজধানী খার্তুমের কিছু অংশ দখল করে নেয়। তবে সেনাবাহিনীর বিমান হামলা এবং আর্টিলারি গোলাবর্ষণে আধাসামরিক এই বাহিনীকে তাদের জায়গা থেকেই খুব সামান্যই বিতাড়িত করা গেছে।

কিন্তু যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় আরএসএফ গোলাবারুদ এবং জ্বালানি সরবরাহে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

বুইউ