রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩, ০৩:৫১ পিএম

ঢাকাঃ তহবিলের গুরুতর ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেওয়া সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড পোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)।

জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ মার্চ থেকে মাসিক ভাতা ১৭ শতাংশ কমিয়ে প্রতি জনপ্রতি ১০ ডলার করা হবে। ডব্লিউএফপি কর্মকর্তারা আরও সতর্ক করেছেন এপ্রিলের মধ্যে নতুন তহবিল ছাড়া আরও কাটছাঁট প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যেই সংস্থাটি নতুন করে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের তহবিলের জন্য আবেদন করছে।

খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টার মাইকেল ফাখরি এবং মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজ বৃহস্পতিবার একটি যৌথ বিবৃতি বলেছেন, যদি এই কাটছাঁট করা হয়, তবে সেগুলো এমন দুর্বল লোকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে যারা ইতিমধ্যেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইতিমধ্যেই উচ্চমাত্রার অপুষ্টি রয়েছে। যেখানে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু স্টান্টেড এবং কম ওজনের সমস্যায় ভুগছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই কাটছাঁটের ফল হবে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘস্থায়ী, কারণ রোহিঙ্গা তাদের পুষ্টির চাহিদার জন্য এই সহায়তার উপর প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে।

আন্তর্জাতিক এনজিও সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, আন্তর্জাতিক দাতাদের রোহিঙ্গাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেন-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ওনো ভ্যান মানেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা শিশু এবং তাদের পরিবারগুলো এখন বিপর্যয়ের পর্যায়ে রয়েছে এবং তাদের আরও সমর্থন প্রয়োজন, কম নয়।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে শরণার্থীর আগমনের পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পরে আমরা ক্ষুধা ও অপুষ্টির পাশাপাশি বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রমের রিপোর্ট শুনছি, এমন সময়ে যখন বাবা-মায়ের কাজ করার প্রায় কোনও সুযোগ নেই, এবং পরিবারগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নির্মম নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা কয়েক লাখসহ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তবে প্রতি বছর হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই অঞ্চলের অন্যান্য মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ভ্রমণের জন্য বিপদজনক যাত্রা করে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বলেছে, ২০২২ বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় এক দশকের মধ্যে সমুদ্রে সবচেয়ে মারাত্মক বছর হতে পারে।

ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, আনুমানিক ১ হাজার ৯২০ জন রোহিঙ্গা গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে সমুদ্রপথে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ছেড়েছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া নৌকাগুলোর জন্য একটি সাধারণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে এবং পাচারকারীরা সেখানে শরণার্থীদের একটি ভাল জীবন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

সূত্র: আলজাজিরা

বুইউ