ন্যাটোর নিন্দা করে ফিনল্যান্ড-সুইডেনকে পুতিনের হুঁশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ৩০, ২০২২, ১০:৫৪ এএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর ‘সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার’ নিন্দা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক এই জোটটিকে ইউক্রেন সংঘাতের মাধ্যমে ‘আধিপত্য’ জোরদারের চেষ্টা করার জন্যও অভিযুক্ত করেছেন তিনি।

একইসঙ্গে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সতর্কও করেছেন রুশ এই প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান এই নেতা বুধবার বলেছেন, সামরিক জোটে যোগদানের পরে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনে ন্যাটো যদি সৈন্য ও অবকাঠামো মোতায়েন করে তবে তিনি তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনের সঙ্গে আমাদের যে সমস্যা তা ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সঙ্গে নেই। তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়, দিতে থাকুক’। মধ্য এশিয়ার সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশ তুর্কমেনিস্তানে আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে আলাপের পর পুতিন বলেন, ‘তবে তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে আগে কোনও হুমকি ছিল না, এখন, যদি সেখানে সামরিক দল এবং অবকাঠামো মোতায়েন করা হয়, তবে আমাদের সদয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে এবং যে অঞ্চলগুলি থেকে আমাদের প্রতি হুমকি তৈরি করা হয়েছে তাদের জন্য একই হুমকি তৈরি করতে হবে’।

পুতিন বলেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পর হেলসিঙ্কি এবং স্টকহোমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক খারাপ হওয়া এড়ানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু এখন কিছু উত্তেজনা থাকতে পারে, অবশ্যই থাকবে। আমাদের জন্য হুমকি থাকলে তা অনিবার্য’।

তিন দেশ একে অপরের নিরাপত্তা রক্ষায় সম্মত হওয়ার পর ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের জোটে যোগদানের ওপর থেকে আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয় ন্যাটো সদস্য দেশ তুরস্ক। এর একদিন পর পুতিন তার মন্তব্য করেছেন।

ওই পদক্ষেপের অর্থ হচ্ছে হেলসিঙ্কি ও স্টকহোম এখন তাদের ন্যাটো যোগদানের আবেদন নিয়ে সামনে আগাতে পারবে। এর ফলে গত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের নিরাপত্তায় বড় বদল আসছে।

পুতিন বলেন, ইউক্রেনে চালানো রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ লক্ষ্য এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি জানান এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলকে স্বাধীন করা এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতের শর্ত তৈরি করা।

পুতিন জানান রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অগ্রগতি অর্জন করছে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাচ্ছে। তিনি বলেন, এই অভিযান কবে শেষ হবে তার কোনও দিনক্ষণ ঠিক করার কোনও প্রয়োজন নেই।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য করায় আপত্তি প্রত্যাহার করেছে তুরস্ক। এরপর পুতিন এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন। এতদিন নরডিক দেশ দুটিকে ন্যাটোভুক্ত করায় ভেটো দিচ্ছিল আঙ্কারা। তবে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সেই অবস্থান পরিবর্তনে রাজি হয়েছে এরদোয়ান প্রশাসন।

ন্যাটোর নিয়ম অনুসারে, নতুন কোনো সদস্য নিতে হলে জোটের সব দেশেরই সম্মতি থাকতে হয়। ফলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার আবেদন জানালেও তুরস্কের আপত্তির কারণে তা এতদিন আটকে ছিল। 

এদিকে ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ক্রেমেনচুকের একটি জনবহুল শপিংমলে চলানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। গত সোমবার ইউক্রেনীয় ওই শপিংমলে হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।

তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী কোনো বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা করে না। কোথায় কী আছে তা জানার সব ক্ষমতা আমাদের আছে।’

এমবুইউ