তীব্র খাদ্য সংকটে আফগানিস্তানে ঈদও যেন ধূসর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ২, ২০২২, ১১:৫৫ এএম

ঢাকাঃ রোববার (১ মে) দেশ জুড়ে ঈদ উদযাপন করেছে আফগানিস্তানের নাগরিকরা। দেশটির লাখ লাখ ক্ষুধার্তের জন্য দিনটি সামান্য আনন্দ নিয়ে এসেছিল।

জাতিসংঘের মতে ৯০ শতাংশেরও বেশি অভুক্তের দেশটিতে ঈদের দিনের খাবারের সন্ধান ছিল নতুন আরেকটি সংগ্রাম। দাতব্য সংস্থা আর ধনী প্রতিবেশীদের থেকে প্রাপ্ত খাবারেই ঈদের আনন্দ খুঁজে নিয়েছে অধিকাংশ আফগান।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বাসিন্দা জামাল। ৩৮ বছর বয়সী এই আফগান বার্তা সংস্থা আলজাজিরার কাছে বলেন, ‘‘এটি আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ রমজান।’’

জামাল বলেন, ‘‘প্রতি রমজান এবং ঈদে আমরা পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সাথে ইবাদত করতে আসি। এই মাস এবং ঈদ সবসময়ই আমাদের জন্য একতা ও ক্ষমার বিষয়, কিন্তু এ বছর হয়েছে তার উল্টো।’’

গত বছর তালেবান আফগানিস্তানের দখলের পর সরকারি চাকুরীজীবী জামালকে বরখাস্ত করা হয়। এরপরই জামালের জীবনে নেমে আসে দুর্দশা। তিনি বলেন, ‘‘আমি সবসময় আমার দেশের সেবা করতে চেয়েছিলাম। আমি সামরিক বাহিনীতে ছিলাম না, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। তবুও তারা আমাকে বরখাস্ত করেছে।’’

ঈদের দিন পূর্বাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারে ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছিলেন তালেবান নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা। নামাজে অংশ নিয়ে আফগানদের ‘জয়, স্বাধীনতা এবং সাফল্যের’ জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু তার ভাষণে মানবিক সংকট ও অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোন উল্লেখ ছিল না। ছিল না খাদ্যের অভাবে ধুঁকতে থাকা লাখ লাখ আফগানের কথাও।

আফগানিস্তানে মানবেতর ঈদ পালনের পেছনে দায় রয়েছে পশ্চিমাদেরও। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য নিরাপত্তার মাত্রা কমে গেছে দেশটির। এমতাবস্থায় এনজিও ও দাতব্য সংস্থাগুলো খাদ্য সরবরাহের প্রচেষ্টা চালালেও, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা আফগানদের জন্য জীবন রক্ষাকারী সহায়তা উপাদান সংগ্রহকে কঠিন করে তুলেছে।

দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকায়, সাহায্য ও সেবা চাওয়া পরিবারের সংখ্যাও বেড়ে চলছে। দেশটির নানগারহার প্রদেশের একজন সমাজকর্মী আব্দুল মানান মোমান্দ বলেন, ‘‘আমরা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে কাজ করছি, তবে এই বছরটি সবচেয়ে খারাপ ছিল।’’

তিনি আরও জানান, নতুন নতুন পরিবার তাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসছেন যারা আগে সচ্ছল ছিলেন। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর পরিবারগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ব্যাপক বেকারত্বের সাথে দেশটিতে চলছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। প্রাক্তন সরকারী কর্মকর্তা আহমদ জামাল সুজা জানান, ‘‘ইতিমধ্যেই উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হারে দেশ জর্জরিত, আর রমজানের সময় সর্বদা কিছু দাম বৃদ্ধি পায়।’’

তিনি জানান, এক বস্তা আটার দাম ১৬০০ আফগানি থেকে ২ হাজার ৭০০ আফগানিতে পৌঁছেছে। ৪০০ আফগানির এক ক্যান তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণের বেশি।

এমএম