কাবুলের মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ৫০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক এপ্রিল ৩০, ২০২২, ০৯:১৭ এএম

ঢাকাঃ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি মসজিদে শক্তিশালী বিস্ফোরণে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৭৮ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জিকিরে অংশ নেয়া মুসল্লিদের লক্ষ্য করে এই বোমা হামলা চালানো হয়।

পবিত্র রমজান মাসে আফগানিস্তানে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক হামলার সর্বশেষ ঘটনা এটি। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করেনি।

ওয়াহিদ নামে ৩০ বছর বয়সী এক যুবক বলেন, তিনি বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এরপর ছুটে যান মসজিদে। তার ভাই ছিল সেখানে। তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতেও সহযোগিতা করেন ওই যুবক। ওয়াহিদ বলেন, ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন তিনি, আশপাশের সবাই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং চিৎকার করছে।

মসজিদের প্রধান সাইদ ফাজিল আঘা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে আত্মঘাতী কোনো হামলাকারী অংশ নিতে পারেন নামাজে। তিনি বলেন, আমি বেঁচে গেছি, কিন্তু স্বজন হারিয়েছি।

আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র বেসমুল্লা হাবিব জানান, শুক্রবার বিকেলে রাজধানী শহরের পশ্চিমে খলিফা সাহেব মসজিদে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় মুসল্লিরা মসজিদে জুমার নামাজ শেষে জিকিরে অংশ নিতে সমবেত হয়েছিলেন।

কাবুলের শহরতলির ইমার্জেন্সি হসপিটাল জানিয়েছে, সেখানে ২১ জন আহতকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর দুইজন হাসপাতালে পৌঁছানোর সময়ই মারা গেছেন।

হাসপাতালের একজন নার্স জানান, চিকিৎসাধীন আহত কয়েকজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৩০টি লাশ নেয়া হয়েছে বলে জানান এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

অন্য হাসপাতালের এক কর্মী জানান, সেখানে ৪৯ জন রোগী এবং পাঁচজনের মরদেহ রয়েছে। আহতদের মধ্যে দশজনের অবস্থা গুরুতর। প্রায় ২০ জনকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত ৬৬ জনের মরদেহ নেয়া হয়েছে। চিকিৎসার জন্য ভর্তি রয়েছে ৭৮জন। ক্ষমতাসীন তালেবানের একজন মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগানিস্তানে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে বহু আফগান বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এসব হামলার কয়েকটির দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

ইমার্জেন্সি হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা শুধু এপ্রিল মাসেই কাবুলে হামলায় আহত শতাধিক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছে। সর্বশেষ হামলাটি হলো ঈদের ছুটির শুরুতে। পবিত্র জুমাতুল বিদার দিনে।

ক্ষমতাসীন তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে তারা দেশটিকে সুরক্ষিত করেছে এবং ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখাগুলোকে অনেকাংশেই নির্মূল করতে পেরেছে। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটিতে জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানের ঝুঁকি রয়ে গেছে।

অনেক হামলায় শিয়া সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে সুন্নি মসজিদেও হামলা হয়েছে।

এর আগে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে আলাদা দুটি মিনিবাসে থাকা বোমা বিস্ফোরণে অন্তত নয়জন নিহত হন। দুটি ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৩ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) এ হামলার ঘটনা ঘটে। শহরটিতে একটি শিয়া মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক সপ্তাহ পর ফের এ হামলা হয়।

গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটিতে জনসমাগমস্থলে হামলা বেড়ে গেছে। এসব হামলার ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তালেবান সরকার। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের খোরাসান শাখাকে (আইএস-কে) পরাজিত করেছে বলে দাবি করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আইএস তালেবানের মতো একটি সুন্নি দল কিন্তু দুটি গোষ্ঠীই তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। উভয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় আদর্শগত পার্থক্য হলো তালেবানরা শুধু বিদেশি বাহিনী মুক্ত আফগানিস্তান চেয়েছিল, যেখানে আইএস একটি ইসলামী খেলাফত চায়।

এমএম