প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেল আরও ৪০ হাজার পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০২৩, ১২:১৫ পিএম

ঢাকাঃ চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ আধা-পাকা ঘর পেয়েছে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার। আজ বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এদিন ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তিনটি উপজেলায় উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। উপজেলা তিনটি হলো, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।

একই অনুষ্ঠান থেকে তিনি সাত জেলার (মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা) সব উপজেলাসহ সারা দেশের ১৫৯ উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন।

এর আগে আরও দুটি জেলার (পঞ্চগড় ও মাগুরা) সব উপজেলাসহ মোট ৫২ উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে এখন সর্বমোট ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

এসব জেলা ও উপজেলাতেও নদীভাঙন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোনো কারণে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন হয়ে পড়লে তাদের পরিবারকে চিহ্নিত করেও জমির মালিকানাসহ ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

আজ চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে করে চিহ্নিত ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি পরিবারের মধ্যে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন হলো। অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৪১০টি পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০টি পরিবার চিহ্নিত করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ জমিসহ একক গৃহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাকি ২১ হাজার ৪০৪টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘দেশের কোনোও মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ বলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দেশে প্রথম ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পুনরায় জমি ও ঘরের মালিকানা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন।

এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট সাত লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবারপ্রতি ৫ জন হিসেবে এ কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সমান কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরও দুই লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার।

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না বলে ঘোষণা করেন। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিরলসভাবে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শুধু মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২৩ সালের এ পর্যন্ত সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে পুনর্বাসন কার্যক্রমের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ মানুষ।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে পরিবারভিত্তিক স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দুই শতাংশ জমির মালিকানার দলিল ও নামজারি সম্পাদন করে দেওয়া হয়। এই জমিতে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দুটি কক্ষ, প্রশস্ত বারান্দা, একটি স্যানিটারি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর সম্বলিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব ডিজাইনের একটি অনন্য সাধারণ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

বুইউ