পরিবহন খরচের তেজে সস্তার সবজি বাজারেও নেই স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৯, ২০২২, ০৩:১৮ পিএম

ঢাকাঃ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য সবজি বাজার। একেকটি বাজার একেক বৈশিষ্টের কারণে পরিচিত। যেমন কারওয়ান বাজার দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার। হাতিরপুলের বাজারকে বলা হয় ‘বড়লোকের বাজার’। এখানে অন্যান্য বাজারের থেকে দাম বেশি। আর মিরপুর-১ এর দিয়াবাড়ি বাজারকে বলা হয় ‘সস্তার সবজি বাজার’। কারণ নগরীর অন্যান্য কাঁচাবাজারের তুলনায় এখানে দাম কম।

এ বাজারে পণ্য হাত বদল হয় কম। বিক্রেতা সরাসরি সবজি বিক্রি করতে পারেন। অন্যান্য বাজারের মতো নিয়মকানুনের বেড়াজাল নেই বাজারটিতে। তবে এই সস্তার বাজারের ব্যস্ততাও কমেছে। বাজারটিতে ট্রাকও কম প্রবেশ করছে। ক্রেতার আনাগোনাও কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেল ডিজেলের হঠাৎ দাম বৃদ্ধির প্রভাব এটি।

রাত ১২টা থেকে বেচাকেনা শুরু হয়ে সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বাজারটির কার্যক্রম। এরপর আর সেখানে লোকজন থাকে না। মঙ্গলবার সকালে সেই কাঁচাবাজারে দেখা যায়, সব সবজির দাম চড়া। সবার মুখে একই কথা, ডিজেলের দাম বেড়েছে। ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে আর এর প্রভাব পড়েছে কাঁচাবাজারে।

বিক্রেতারা বলছেন, কম দামে কিনলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারি। ক্রেতাদের সঙ্গে দামদর করতে হয় কম। কিন্তু দাম বাড়ায় অনেক বেশি দামদর করতে হচ্ছে।

মো. কামাল উদ্দিন বাজারে দীর্ঘদিন সবজি বিক্রি করেন। তার মতে, ঢাকা শহরে এত কম দামে অন্য কোনো বাজারে সবজি বিক্রি করে না। সেই বাজারেও পাইকারি সবজির দাম চড়া। তিনি বর্তমানে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) কাঁচা মরিচ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

কামাল উদ্দিন বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা মরিচ আরও কম দামে বিক্রি করা যেত। কিন্তু পরিবহন খরচ বাড়তি। আমরা হিলি বর্ডার থেকে কাঁচামরিচ ট্রাকে করে নিয়ে আসি। ট্রাকের ডিজেল খরচ বেড়েছে। শুধু ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণেই সবজির দাম বাড়তি। সরকারকে বলবো দরকার হয় অকটেন ও পেট্রোলের দাম আরও বৃদ্ধি করেন, কিন্তু ডিজেলের দাম আগের মতো রাখুন।

কিশোরগঞ্জ থেকে কচু এনে এই কাঁচাবাজারে বিক্রি করেন মুর্শিদ মিয়া। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে চারটি বা এক হালি বড় কচু ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ফলে চারটি বড় কচুর দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

কচুর দাম প্রসঙ্গে মুর্শিদ মিয়া বলেন, আগে বড় কচুর হালি বেচতাম ৭০ টাকা ৮০ টাকা এখন ১২০ টাকা। তেলের দাম বাড়তি, গাড়ি ভাড়া বাড়তি, কী করবো?

কেজিপ্রতি পাইকারিতে কিছুটা বেড়ে মিষ্টি কুমড়া ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জামালপুর থেকে এসব মিষ্টি কুমড়া বাজারে তোলা হয়। সেখান থেকে আগে গাড়ি ভাড়া ছিল ৯ হাজার টাকা এখন বেড়ে ১৩ হাজার টাকা হয়েছে।

কুমড়া বিক্রেতা লিখন শেখ বলেন, তেলের দাম বাড়তি, গাড়ির খরচ বেড়েছে। আগে গাড়ি ভাড়া ছিল ৯ হাজার, এখন জামালপুর থেকে কুমড়া আইতে (আসতে) খরচ ১৩ হাজার টাকা। কুমড়া বেইচ্যাই আমাদের তেল খরচা উঠান লাগে। বাড়তি দাম চাইলে ক্রেতাও ডর করে, আমরা কী করবো? আগের থেকে বেচাকেনা অনেক কম।

এই বাজারে আগে পাইকারি প্রতিটি লাউ ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন তা বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। পাইকারিতে ২ টাকা বেড়ে পেঁপের কেজি ১২ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

এই বাজারে কাঁচাবাজারের মূল স্থান পেরিয়ে রাস্তায় চলে বিক্রি। তবে সেই ভিড়ও কমেছে। এখন তেমন একটা ভিড় নেই। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্য বাজারে কম এসেছে এবং দামও বাড়তি।

পাইকারি সবজি বিক্রেতা দাউদ মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন এখানে সবজি পাইকারি বিক্রি করি। ঢাকার অন্যান্য বাজারেও আমাদের ব্যবসা আছে। তুলনামূলকভাবে এই বাজারে দাম কম। কিন্তু গাড়ি ভাড়া বাড়তির কারণে সবজির দাম যা বেড়েছে আমার জীবনে কখনো দেখিনি। একমাত্র পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি আছে বলে আপাতত জানা নাই।

এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে হাইব্রিড পেয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়, ভারতীয় পেয়াজ ১৮০ টাকায় আর দেশি পেয়াজ ২৪০ টাকায়। অথচ কয়েকদিন আগেও ২২০ টাকায় দেশি পেঁয়াজ এবং অন্যগুলোও ১০-২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এখন পাল্লায় ১০ থেকে ২০ টাকা এবং কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।

খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় আর ভারতীয় ৪০ টাকায়।

আলুর দাম পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে। ১৩০ টাকা ছিল পাল্লা (৫ কেজি)। ১০ টাকা কমে এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

খুচরা বাজারে দেশি আদা কেজি ১০০ টাকা এবং ভারতীয় ১১০ টাকা; চায়না রসুন ১২০ ও ১৪০ টাকা এবং দেশি রসুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।

এছাড়া দাম বাড়ার পর কচুর লতি ৬০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ধুন্দল ৪০-৫০ টাকা, কচুমুখী ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এমবুইউ