দুষ্টচক্রের কবলে বাজার

ডেস্ক রিপোর্ট অক্টোবর ২৭, ২০২০, ০১:২০ পিএম
ছবি সংগৃহীত

ঢাকাঃ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশের স্থানীয় বাজারে উল্টো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এর প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে। করোনার মধ্যে একদিকে মানুষের আয় কমছে, অন্যদিকে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের দুষ্টচক্রের কবলে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

বাজারে এখন প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেশি। চাল, পেঁয়াজ, আলু ও সব ধরনের সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যে পণ্যের দাম একবার কোনো কারণে বাড়ে সে দামই স্থায়ী হয়ে যায়। চালের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হলেও দাম বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, পেঁয়াজ ও আলু বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও ভারত থেকে আমদানি বন্ধ ও দেশে বৃষ্টির কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবার শীতকালীন আগাম সবজি উৎপাদন দেরি হওয়ার কারণ দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব সবজির দামও আকাশছোঁয়া। অথচ কৃষক প্রাপ্য মূল্য পাচ্ছে না। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার দুষ্টচক্রের কবলে পড়েছে। ভোক্তাদের জিম্মি করে এসব দুষ্টু ব্যবসায়ী নানা ধরনের সুবিধা নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বলতার সুযোগে বাজারে এ চক্রের আধিপত্য চলছেই। তারা বিভিন্ন সময়ে পণ্যের সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লুটছে।

তাই বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমার পরও এর সুফল পাচ্ছেন না দেশের সাধারণ জনগণ। দেশে সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশে।

তেলসহ উল্লেখ্যযোগ্য ভোগ্যপণ্য আমদানিনির্ভর। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে দেশের বাজারে বাড়ে কিন্তু পণ্যমূল্য কমলেও সুফল মিলছে না। করোনা মহামারীর ধাক্কায় বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমে গেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি বছরজুড়েই এই দাম কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। সংস্থাটির ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক, অক্টোবর ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্ভাবাস দেওয়া হয়েছে। তবে সে অনুযায়ী দেশের আভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রভাব তো পড়েনি বরং দাম বেড়েছে বেশির ভাগ পণ্যের।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক কার্যক্রম হঠাৎ থমকে যাওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জ্বালানি ও ধাতবপণ্যের বাজার। সেই সঙ্গে মন্দার কবলে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। জ্বালানি তেলসহ পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর দাম সবচেয়ে কমেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে কৃষিপণ্যে মাঝারি ধরনের প্রভাবের পূর্বাভাস দিলেও সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবং আমদানিনির্ভর হওয়ায় অনেক দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেক কমেছে। এপ্রিলে তেলের দামে ঐতিহাসিক পতন হয়। প্রথমবারের মতো মার্কিন বাজারে তেলের দাম ঋণাত্মক হয়। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, চলতি বছর অপরিশোধিত তেলের দাম গড়ে ৪১ ডলার থাকতে পারে, যা ২০২১ সালে বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৪৪ ডলারে দাঁড়াতে পারে। সামগ্রিকভাবে জ্বালানির দাম (এর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা অন্তর্ভুক্ত) ২০২০ সালে গড়ে ৪০ শতাংশ কমবে। ২০২০ সালজুড়ে ধাতবপণ্যের দাম ১৩ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। চাহিদা কমার পাশাপাশি অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটি হবে। পরিবহন খরচ কমে আসায় কৃষিপণ্যের দাম কম হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দেশের বাজারে পণ্যের দাম কমে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাজার ব্যবস্থায় কিছু ভুল আছে। বড় পাইকারদের নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রতিযোগিতার সম ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। বাজারের ওপর প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ কমালে সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। এগুলো শুধরে নিলেই বাজার স্বাভাবিক গতিতে চলবে।

এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বাজারে অসাধু সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেট রোধে প্রতিযোগিতামূলক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি বাস্তবতার ভিত্তিতে টিসিবিকে কার্যকর করা, গণপরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনা এবং দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখতে জাতীয় মূল্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আগামীনিউজ/জেহিন