রেঞ্জ দিয়ে পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলেন শিবিরকর্মী মাহদি

নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৩০, ২০২২, ০৩:৫৯ পিএম

ঢাকাঃ পদ্মা সেতুর অবকাঠামোর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ভিডিও ধারণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজে জড়িত মাহদি হাসান ওরফে মেহেদিকে (২৭) গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতার মাহদি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে আলিম-দাখিল শেষ করেছেন। তিনি মাদ্রাসায় পড়াকালীন শিবিরকর্মী ছিলেন। বুধবার (২৯ জুন) রাতে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ভিডিও ধারণকৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরের দিন যখন সবার জন্য সেতু উন্মুক্ত করা হয় সে দিন মাহদি রেঞ্জ নিয়ে সেখানে যায়। সে রেঞ্জ দিয়ে সেতুর নাট-বল্টু খোলে। সে নাট-বল্টু খোলার পরিকল্পনা করেই সেতুতে যায়।

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার মাহদি তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র। সেখানে ছাত্র অবস্থায় সে শিবিরের কর্মী ছিল। সেই মাদ্রাসা থেকে দাখিল আলিম পাসের পর কবি নজরুল কলেজে ভর্তি হয়। তবে তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। তবে পড়াশোনা না করলেও সে গ্রামের বাড়িতে থাকত না, ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে থাকত।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতুর এই সাফল্যকে ছোট করা এবং জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২৬ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাহদি হাসান পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে আবার লাগিয়ে দিচ্ছে।

সিটিটিসির সাইবার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের নজরদারির ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এলাকা থেকে মাহদিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু উত্তর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সরকারের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাহদি এই কাজ করেছে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার আগের রাতে মাহদি তার সঙ্গীদের নিয়ে পদ্মা সেতুতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ২৬ জুন সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার দিন ভোরে মাহদি সঙ্গীদের নিয়ে মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু পার হয়ে ওই পাড়ে যায়।

তারা এমন ঘটনার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে, কিন্তু মানুষজন বেশি থাকায় তারা সেটা পারছিল না। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অপরপ্রান্ত থেকে ফেরার সময় মাওয়া প্রান্তে এসে সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে ভিডিও করেন মাহদি।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, মাহদি ভিডিওতে বলছিলেন, ‘আমি কিন্তু রেঞ্জ ব্যবহার করছি না’। সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আপত্তিকর রেঞ্জ শব্দটি ব্যবহার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহদি স্বীকার করেছে, রেঞ্জ দিয়ে প্রথমে নাট খুলে লুজ করে, পরে হাত দিয়ে খুলে ভিডিও বানানো হয়।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাহদিসহ তার সঙ্গীরা সেতুর নাট খুলতে রেঞ্জ নিয়ে গিয়েছিল। আমরা মাহদির সঙ্গীদের খুঁজছি, তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে হয়ত নাট খোলায় ব্যবহৃত রেঞ্জটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। মাহদিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আর কোনো উদ্দেশ ছিল কি না তা জানা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে যাতে কেউ কোনো অপতৎপরতা চালাতে না পারে এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সেতু এলাকায়ও আমাদের সার্ভিলেন্স রয়েছে।

তার অন্য সহযোগীদের নাম-পরিচয় না জানালেও তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান।

এমবুইউ