১২ ঘণ্টা পর তেলবাহী জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে

জেলা প্রতিনিধি, ঝালকাঠি জুলাই ৪, ২০২৩, ০৯:৩৮ এএম

ঝালকাঠিঃ জেলার সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরণ হওয়া তেলবাহী ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-২ দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন উদ্ধার কর্মীরা।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক ফিরোজ কুতুবী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফিরোজ কুতুবী বলেন, জাহাজটিতে আর কোনো তেল অবশিষ্ট নেই। সব পুড়ে আজ ভোর সাড়ে ৫টার পর আগুন নিভে যায়। আমরা গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করি। অগ্নিনির্বাপণে বরিশাল বিভাগে মজুত থাকা সব ফোম ব্যবহারের পর খুলনা থেকেও ফোম নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। তেল পুড়ে নিঃশেষ হয়ে অবশেষে আগুন নিভেছে। আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এরআগে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের পৌরসভার খেয়াঘাট সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এসময় সাগর নন্দিনী ৪ নামে একটি জাহাজ পাশেই নোঙর করা ছিল। সেটির আগুন নিয়ন্ত্রণ এনে রাত ১২টার দিকে সেটিকে সরিয়ে নেয় ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরা।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। আহতদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিলে গুরুতর আহত ২ পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশ সদস্যসহ দুজনকে ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠান শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অপরজন বরিশালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাকি ১১ জন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন— এসআই গণেশ চন্দ্র ঘরামী (৫০), কনস্টেবল পলাশ (২৫), এসআই হাকিম (৫০), কনস্টেবল মেহেদী (২৭), নৌ–পুলিশের এটিএসআই হেলাল উদ্দিন (৫৫), নায়েক সিদ্দিক (৪৫), এসআই মোস্তফা (৪৩), এছাড়া সাগর নন্দিনী-৪–এর বাবুর্চি কাইয়ুম (৩২) ও স্থানীয় শ্রমিক হালিম হাওলাদার (৫০)। গুরুতর দগ্ধ দুজন হলেন কনস্টেবল শওকত (৩৫) ও দ্বিপ (৩২)।

আহত কনস্টেবল মেহেদী জানান, আমরা জাহাজের পাশেই ট্রলারে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হওয়ায় আমাদের ট্রলারের চালকও নদীতে লাফিয়ে পড়ে। আমরা মহাবিপদের মধ্যে পড়ে যাই। ট্রলারটিকেও সরাতে পারছিলাম না। আগুনের তাপ প্রচন্ডভাবে আমাদের শরীরে লাগে। জীবন বাঁচাতে আমরাও যে যার মতো করে নদীতে লাফিয়ে পড়ি।

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, সুগন্ধা নদীতে ফের বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দগ্ধ ও আহত ১০ পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে আলাদা  ইউনিট চালু করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যসহ ৩ জনকে বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাকি ১১ জনকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক লিটন আহমেদ বলেন, আমাদের ১১টি ইউনিট ও অগ্নি যোদ্ধা জাহাজ দিয়ে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছি।

উল্লেখ্য, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটিতে প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল (পেট্রল ও ডিজেল) ছিল। সেখান থেকে সাত লাখ লিটার পেট্রোল পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মৃদুলা-৫ এবং সেভেন সিমাক-২ জাহাজের মাধ্যমে ৬ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল স্থানান্তর করে পদ্মা ডিপোতে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানায় ডিপো কর্তৃপক্ষ। এরপর সাগর নন্দিনী-২ জাহাজ থেকে ৪ লাখ পেট্রোল অপসারণের সময় হঠাৎ আগুন লেগে যায়। পরে আস্তে আস্তে পাশে থাকা জাহাজটিতে আগুন লেগে যায়।

এর আগে, গত শনিবার (১ জুলাই) দুপুরে সাগর নন্দিনী-২ তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণে মাষ্টার ব্রিজ ও স্টাফ কেবিনসহ পিছনের ইঞ্জিন রুমের উপরিভাগ নদীতে ডুবে যায়। সুগন্ধা নদীতে এ ঘটনায় ৫ জন আহত ও ৪ জন নিখোঁজ ছিলেন।

পরে রোববার (২ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে জাহাজের পিছনের ইঞ্জিন রুমের ভিতর থেকে গ্রিজার আব্দুস ছালাম হৃদয় নামে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে প্রথমে জাহাজের সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল, পরে সাড়ে ১২টার দিকে মাস্টার রুহুল আমিন, দুপুরে ইঞ্জিন ড্রাইভার সরোয়ার হোসেন আকরাম এর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

বুইউ