সুবর্ণচরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, ভোগান্তি

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী এপ্রিল ১০, ২০২৩, ০৩:৫৫ পিএম

নোয়াখালীঃ জেলার সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা রেডক্রিসেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদ ও বিমের পলেস্তারা খসে পড়ছে। জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান, শ্রেণিকক্ষে ঢোকার আগে দরজায় দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকায় শিক্ষার্থীরা। বসার পরও বারবার ওপরে তাকায় তারা। মনে তাদের ভয়, এই বুঝি ছাদ ভেঙে পড়ল। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করাতে গিয়ে শিক্ষকেরাও পড়ছেন বিড়ম্বনায়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চরজব্বার  ইউনিয়নে ১৯৭৩ সালে জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভবনটি ব্যবহৃত হতো। এরপর দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ২০১২ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হলে এ ভবনে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ৪৬৪ জন শিক্ষার্থী ও ১৩ জন শিক্ষক আছে। কিন্তু তখন নিম্নমানের কাজ হওয়ায় শুরু থেকেই চার কক্ষের ভবনটির ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ত।

সরেজমিন দেখা গেছে, দ্বিতল ভবনের সবকক্ষই জরাজীর্ণ। দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের ও ভবনের বিমের পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর নাহার বর্ষা বলেন, ‘ক্লাসে আসা থেকে ছুটির হওয়া পর্যন্ত ভয়ে থাকি, আমাদের স্কুলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরোটাই ফাটল। ক্লাসে বসে থাকতে ভয় লাগে। কখন ছাদ ভাঙি পড়ে। একটু ঝড় বৃষ্টি হলে অভিভাবকেরা স্কুলে আসতে দেয় না ভেঙ্গে পড়ার ভয়। স্যারদের বললে বলে, নতুন স্কুল হবে। কিন্তু কোন দিন সেই নতুন স্কুল হবে?’

আরেক শিক্ষার্থী মো জিহাদ বলে, ‘বর্ষাতে টোপ টোপ করে পানি পড়ে বাই–খাতা নষ্ট হয়। একবার বইয়ের দিকে তাকাই তো আরেকবার ছাদের দিকে তাকাই। রুমে বসে থাকতে ভয় লাগে। স্যার যখন ক্লাস শেষ করে, তখন রুমের বাইরোত যায়া দাঁড়াই।’

জাহাজমারা গ্রামের বাসিন্দা ও অভিভাবক মোসলে উদ্দিন বলেন, স্কুল ভবনটির বর্তমান যে অবস্থা, এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাঁরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন। যে কারণে অনেকে তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে দ্বিধাবোধ করেন। কর্তৃপক্ষের দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছারওয়ার হোসেন বলেন, ক্লাস চলাকালে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা ছাদের দিকে তাকায়। বিদ্যালয়ের এই সমস্যার কথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে শ্রেণিকক্ষের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে হচ্ছে।

চরজব্বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুক বলেন, শ্রেণিকক্ষের এমন অবস্থা দীর্ঘদিনের। অথচ উপজেলা শিক্ষা ও উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর অবহিত করা হয়েছে, সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, এই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনে সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

শিক্ষা নির্বাহী প্রকৌশলী দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।  ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।

বুইউ