রাজবাড়ীর ৫৭৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ০৩:১০ পিএম

রাজবাড়ীঃ জেলার পাঁচ উপজেলা ও ৩টি পৌর সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৭৪৬টি। এর মধ্যে মাত্র ১৬৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আছে শহীদ মিনার। বাকি ৫৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই।

জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষা অর্জনের তাৎপর্য ও শহীদদের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজবাড়ী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার ১৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শহীদ মিনার নেই ৫৫টি প্রতিষ্ঠানে। কলেজ রয়েছে ৪৩টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৩০ কলেজে। জেলায় ৭৪টি মাদরাসা থাকলেও শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র ১টি মাদরাসায়।

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টি স্কুলে শহীদ মিনার থাকলেও ১১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। 

গোয়ালন্দ উপজেলার ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬টি স্কুলে শহীদ মিনার আছে, আর ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।

পাংশা উপজেলায় ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ১১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। 

বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলেও ৮৯টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। 

কালুখালী উপজেলায় ৭৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলেও নেই ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ।

এসব উপজেলার শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সরকারি অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ভাষা শহীদদের স্মরণে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা যায়নি। 

গোয়ালন্দ উপজেলার নবুওছিমুদ্দিন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি না। একটা শহীদ মিনার থাকলে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারতাম।

একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় স্কুল মাঠে কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে মাতৃভাষা দিবস, ১৬ ডিসেম্বরসহ জাতীয় দিবসগুলো পালন করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে আমাদের প্রতিবছর কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করতে হতো না।

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বলেন, মাতৃভাষা সম্পর্কে জানতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরুরি। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার ছিল। কিন্তু নতুন একাডেমি ভবন তৈরি করার কারণে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে।

সরকারের কাছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেন, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য অবশ্যই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করা প্রয়োজন।

রাজবাড়ী সদরের শের এ বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, অনেক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী শহীদ মিনার থাকায় সেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তারপরও ইতিহাস জানতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা দরকার।
উজানচর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ বাবর আলী বলেন, মাতৃভাষা সম্পর্কে জানতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখবে।

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মন্ডল জেলার সকল প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকার কথা নিশ্চিত করে জানান, সরকারি নির্ধারিত কোনো বরাদ্দ না থাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তবে এলাকার কেউ নিজ উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে দিতে পারেন।

রাজবাড়ী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, মাতৃভাষা দিবস পালন করতে অবশ্যই শহীদ মিনারের কোনো বিকল্প নেই। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই পর্যায়ক্রমে সেগুলোতেও শহীদ মিনার তৈরি করা হবে।

বুইউ