‘ভোট দিলেও ওমরা এমপি হবে, না দিলেও ওমরাই এমপি হবে’ 

উপজেলা প্রতিনিধি, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩, ০৩:২৫ পিএম

ঠাকুরগাঁওঃ ‘ভোট দিলেও ওমরা এমপি হবে, না দিলেও ওমরাই এমপি হবে। ভোটে দাঁড়ানো ছয়জন প্রার্থীর কাহকেই মোর পছন্দ না। তাই হামরা গোটা পরিবারের লোকলা (লোকেরা) ভোট দিবা যামোইনি (যাব না) আগেই ঠিক করিজি। আইজ হামরা নিজের কাম করিতে ব্যস্ত।’ 

সাংবাদিকদের উদ্দেশেই কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ জোবাইদুর রহমান। 

আজ বুধবার ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। 

সেই নির্বাচনে ভোট দিতে যাননি ওই আসনের ভোটার, পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর মালঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা জোবাইদুর ও তাঁর পরিবার। সেই সঙ্গে জোবাইদুর রহমান দাবি করেছেন, আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যসহ অন্তত ৬০ জন ভোট দিতে যাবেন না। 

বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির পাশে চলাচলের রাস্তায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় বৃদ্ধ কৃষক জোবাইদুরের। সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন জানতে পেরে তাঁর সঙ্গে নিজে থেকেই আলাপ শুরু করেন তিনি। 

জোবাইদুর বলেন, ‘২০১৮ সালে ভোট দিছিনু। ওই এমপি সিট ছাড়ে দিবার কারণে সাত-আট মাসের জন্য ভোট হচে। এলা লোক দেখাবার তানে (জন্য) এইলা (এসব) করেছে। সরকারটা যেত দিন ক্ষমতা ছাড়িবেনি, অতদিন ভালো ভোট হবেনি। কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকার না দিলে কোনো দিন ভোট নিরপেক্ষ হবেনি।’ 

তাঁর কথা বলে জানা গেল, জুবাইদুর ওই এলাকার মৃত সফির উদ্দীনের ছেলে। তাঁদের বাড়ি ১ কিলোমিটার দূরে বেতুড়া সেতরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তাঁদের ভোটকেন্দ্র। 

পাশে রাইস মিলের ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন জোবাইদুরের ছেলে আরিফ হোসেন। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘বাবার সিদ্ধান্ত আমরা সবাই মেনে নিয়েছি। আমরা কেউ ভোট দিতে যাব না। তা ছাড়া ভোট দিয়ে তো আমাদের কোনো লাভ নাই। আমাদের কথা ভাবার মতো, কষ্ট লাঘব করার মতো কোনো জনপ্রতিনিধি নাই। সবাই নিজ নিজ স্বার্থের জন্য নির্বাচনে দাঁড়ায়, নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আমরা জনগণ যেমন, তেমনই রয়ে যাই।’ 

ভোটারদের অংশগ্রহণ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে বেতুড়া সেতরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ৩১০ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রটিতে ৩ হাজার ১৯৫ জন ভোটার রয়েছেন। ভোটার বিবেচনায় ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বেলা বাড়লে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।’ 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪ জন। 

এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৪ দলের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি ইয়াসিন আলী হাতুড়ি প্রতীকে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দুবারের এমপি হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ লাঙল প্রতীকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায় একতারা প্রতীকে, জাকের পার্টির এমদাদুল হক গোলাপ ফুল প্রতীকে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সাফি আল আসাদ আম প্রতীকে ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের সিরাজুল ইসলাম টেলিভিশন প্রতীকে।

আনোয়ার হোসেন আকাশ/বুইউ