দুপচাঁচিয়ায় লাশবাহক থেকে খুনি : কে সেই মুক্তার

দেওয়ান পলাশ, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২, ১১:১৩ এএম

বগুড়াঃ খুন, আত্মহত্যাসহ অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন মৃতদেহের লাশ বহন করে থানায় নিয়ে যাওয়া এবং ময়নাতদন্তের প্রয়োজনে জেলা সদরের হাসপাতালে পৌঁছানোর কাজ জীবিকার জন্য অন্যতম পেশা হয়ে উঠেছিল মুক্তারের (৪০)। দুপচাঁচিয়ায় মুক্তার পরিচিতি পায় লাশবাহক হিসাবে। তবে লাশবাহক'ই যে খুনিতে পরিণত হবে, এমনটা ভাবতেই সবার চক্ষু পরিনত হয় চড়কগাছে। ২৮ আগষ্ট (রোববার) রাতে দুপচাঁচিয়া উপজেলার কুশ্বহর -করমজি রাস্তার পাশে খুন হয় হারুন অর রশিদ হারুন নামের এক অটোভ্যান চালক। পরে খুনের রহস্য উদঘাটনপূর্বক মুক্তারসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের ৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) আদালতে পাঠালে স্বেচ্ছায় খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে মুক্তার। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অটোভ্যান চালকের হত্যার খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয়রা। ২৯ আগস্ট ( সোমবার) দুপুর ১২.০০ টার দিকে মুক্তারকে ওই লাশের আশেপাশে ঘুরতে দেখেছে তারা। তারা আরও জানায়, রাতের নির্মম মুক্তারকে সেসময় স্বাভাবিক দেখা গেছে। 

দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানায়, লাশ স্থানান্তরের পূর্বে মুক্তার সেদিন লাশের আশে পাশেই ঘুরছিল এবং এমনকি ওইদিন বিকালে থানায়ও এসেছিল।

কে সেই মুক্তার:

১০ অক্টোবর '২০২১ তারিখে "দুপচাঁচিয়ার লাশবাহক মুক্তারের গল্প" শিরোনামে আগামী নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রস্তুতির সময় কথা হয় মুক্তারের মা, স্ত্রী এবং মুক্তারের সাথে। কথার ছলে উঠে আসে বর্তমানে খুনের ঘটনায় আটককৃত এবং আদালতে স্বেচ্ছায় খুনে জড়িত থাকার স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দীদাতা মুক্তারের জীবনের পিছনের গল্প। 

পাঁচ বছর বয়সেই পিতা শুকুর আলীকে হারায় মুক্তার। মায়ের সাজানো গোছানো সংসার ভেঙে যায়। স্বামীহারা মা তিন পুত্র আর এক কন্যা সন্তান নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন। স্বামীগৃহে টিকতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে মুক্তার হোসেনের নানাবাড়ী চলতে আসতে বাধ্য হয় মা।

বগুড়ার জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার কাথোহালী গ্রাম থেকে মুক্তার হোসেনের মা একই উপজেলার নানাবাড়ি আশুঞ্জা গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে। অভাবের তাড়নায় সন্তানেরাও ছুটে যেতে থাকে জীবিকা অর্জনের পথে।

ছেলেবেলা থেকেই মুক্তার হোসেন খাবারের লোভে নিকটস্থ চৌমূহনী বাজারে সময় কাটাতে শুরু করে। সেখানেই পথের ধারে রাত্রিযাপন করত। অনেকদিন পর পর বাড়ি ফিরত মুক্তার।

একদিন হঠাৎ মালবাহী ট্রাকে উঠে পড়ে মুক্তার  । সে জানে না, তার গন্তব্য কোথায় ! পরে জানতে পারে, সে পৌঁছে গেছে কুষ্টিয়া শহরে। সেখানে আশ্রয় হয় এক ব্যবসায়ীর কাছে। ১৪ বছর কেটে যায় ওই শহরেই। ২১ বছর বয়সে আবার ফিরে আসে মায়ের কাছে। মুক্তারের মা ভেবেছিল, তার ছেলে হারিয়ে গেছে চিরদিনের মত। হঠাৎ আগমনে মা আবেগে আত্মহারা হয়ে উঠে।

ফিরে এসে জীবিকা অন্বেষণ মুক্তার হোসেনের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো কাজে যেন স্থায়ী হতে পারে না সে। জীবন চলার পথে পরিচয় হয় লাশবাহক আইনুল হোসেনের সাথে। অবশেষে তার সাথেই সহযোগী হিসাবে কাজ করতে শুরু করে আইনুল। আইনুল হোসেন শারিরীক অপারগতায় লাশ বহনের কাজ ছেড়ে দিলে লাশ বহনের কাজ পরিপূর্ণভাবে শুরু করে মুক্তার হোসেন।

মুক্তার হোসেন আগামী নিউজকে জানায়, খুন, আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন অস্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তিদের লাশ বহন করে থানায় নিয়ে যাওয়া এবং ময়নাতদন্তের প্রয়োজনে জেলা শহরের হাসপাতালের মর্গে পৌঁছানোর কাজ তার জীবিকার জন্য অন্যতম পেশা হয়ে উঠেছে। এছাড়া চৌমূহনী বাজারে ভ্রাম্যমান চা দোকানি হিসাবেও কাজ করে মুক্তার হোসেন।

মুক্তার আরও জানায়, লাশ বহনের জন্য তার নিজের কোন গাড়ী নাই। এজন্য তাকে গাড়ী ভাড়া নিতে হয়। অনেক সময় গাড়ী ভাড়া নিতে বেগ পেতে হয় তার।

এমবুইউ