স্বপ্নের সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু

আগামী নিউজ প্রতিবেদক জুন ২৬, ২০২২, ০৮:২৮ এএম

মুন্সিগঞ্জঃ এই ভোরের জন্য বহুকাল অপেক্ষায় ছিল পদ্মার দুই পারের মানুষ। যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে শুরু হয় যান চলাচল। রাত থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। 

আর্থিক, প্রকৌশল এবং রাজনৈতিক ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দীর্ঘতম সেতুটি উদ্বোধনের ফলে বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বাংলাদেশের। শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন।

যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট চালু হয়ে যায়। সবকয়টি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। নির্ধারিত টোল দিয়ে থ্রি-হুইলার ছাড়া যেকোনো গাড়ি পার হতে পারছে পদ্মা সেতু দিয়ে

অন্যদিকে, সেতু নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকায় যান চলাচল শুরুর দিন রোববার ভোররাত থেকেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রসওয়ে ভিড় জমায় শতশত যানবাহন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও যথাযথ প্রস্তুতি রেখেছে বলে জানানো হয়েছে।

বেশ কিছু রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষক এমনকি কিছু বিদেশী অংশীদারদেরও অনুমান ছিল যে প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, শক্তিশালী পদ্মা বিজিত হয় এবং উভয় তীরের মানুষ এখন আর অসহায় থাকবে না, কারণ তারা উভয় পাড়ের সঙ্গে সংযোগ পেয়েছে।

আজ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ফেরি ঘাটের ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন ছেড়ে সেতুর উপর দিয়ে মাত্র ৬ মিনিটে সড়কপথে সরাসরি ঢাকায় যাবেন।

স্বপ্নের সেতু শুধু রাজধানী ঢাকা এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগই স্থাপনই করেনি এটি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংযোগ ও বাণিজ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে।

পদ্মা সেতু পারাপারে সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে।

বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।

এছাড়া ছোট ট্রাককে (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের জারি করা এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনও ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

তিন চাকাবিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা ইত্যাদি), হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনও ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত।

একইসঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেনবিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর একে একে সব ধাপ পেরিয়ে পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের ওপর দৃশ্যমান হয়ে ওঠে স্বপ্নের সেতু। এ সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে।

এমবুইউ