ফেলানী হত্যার ১১ বছরেও বিচার পায়নি পরিবার

ডেস্ক রিপোর্ট জানুয়ারি ৬, ২০২২, ১১:১৯ এএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ আজ ৭ জানুয়ারি। সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১১ বছর। ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় রক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মৃত দেহ।

তখন গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফ’র বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার।

ঘটনার দিনটি ছিল শুক্রবার। ভোর ৬টা ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত টপকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হয়ে আধাঘণ্টা ধরে ছটফট করে নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। এরপর সকাল পৌনে ৭টা থেকে নিথর দেহ কাঁটা তারের ওপর ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘন্টা। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়।

বিএসএফ এর এ কোর্টে সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুন:বিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা।

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্ণ: বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ০২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানি দিন ধার্য হলেও তা হয়নি। এরপর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানির তারিখ ধার্য্য হলেও শেষ পর্যন্ত শুনানি সম্পন্ন হয়নি আজও।

এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা। ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম জানান, ফেলানীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িতে নিয়ে আসছিলাম। পরদিন বিয়ে হতো তার। কিন্তু বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ আর দালালরা মিলে আমার মেয়কে হত্যা করলো। আমি এই হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি। মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গেছি। এখন ১১ বছর হয়ে গেল বিচার পেলাম না।

তিনি আরও জানান, ভারতের সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশনটি ২০২০ সালের ১৮ মার্চ শুনানির তারিখ থাকলেও তা হয়নি। করোনাকালীন সময়ে আর কোন খবর রাখা হয়নি।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, ফেলানী হত্যার ১১ বছর হয়ে গেলো আজও বিচার পাইনি। আমি দুই দেশের সরকারের কাছে মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার দাবি করছি।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুর ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। তাই ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে রওনা হয় দেশের উদ্দেশ্যে। ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের ওপর মই বেয়ে আসার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর।

আগামীনিউজ/নাসির