এখনও চলছে সেই করোনা বাজার

মানিক সাহা, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি জুলাই ২২, ২০২১, ১১:৪৪ এএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

গাইবান্ধাঃ এখনও চলছে কাকতালীয়ভাবে গড়ে ওঠা করোনা বাজার। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের শেষপ্রান্তের গ্রাম হাবিবের বাইগুনি। তিন দিক দিয়ে পাশ্বর্বর্তী বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলা বিস্তৃত। অনেকটা বগুড়ার মধ্যে যেন ঢুকে পড়েছে গাইবান্ধা।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের চেয়ে ঘরের নিকট সোনাতলা উপজেলার সাথেই এদের যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি। কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে বড় কিছু কিংবা সামান্য চা বিস্কুট খেতেও ওই গ্রামের বাসিন্দারা সোনাতলায় যায়। উপজেলার সীমান্তবর্তী এই গ্রামকে সোনাতলা থেকে আলাদা করা কঠিন। কিন্তু এই অবাধ যাতায়াতের ব্যবচ্ছেদ ঘটে দেশে গত বছরের বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের শুরুতে। হঠাৎ করেই তাদের সোনাতলায় যাওয়া কিছু মানুষ বন্ধ করে দেয় করোনা আক্রান্ত হওয়ার অজুহাতে। চরম বিপাকে পড়েন গ্রামবাসীরা। উপায়ান্তর না পেয়ে নিজেদের প্রয়োজনে তারা গড়ে তোলেন নতুন একটি বাজার। করোনার অজুহাতে তারা সোনাতলায় বাজার করার  অধিকার হারিয়ে কাকতালীয়ভাবে সেই  বাজারের নাম দেন ‘করোনা বাজার’।

দেশে যে সব জেলায় যখন প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটে তার অন্যতম ছিল গাইবান্ধা জেলা। জেলার দক্ষিণ পূর্ব সীমানার শেষ গ্রাম গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের হাবিবের বাইগুনি গ্রাম। ওই গ্রামের পাশের মিরাপাড়া গ্রামে গত বছর ১১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ ফেরত এক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়। তাঁর সংস্পর্শে একই পরিবারের আরও চারজনের করোনা শনাক্ত হয়।

তাদের করোনা সংক্রমণে আতংকিত হয়ে পরে সমগ্র জেলা সহ পাশ্ববর্তী সোনাতলার উপজেলার জনগণ। তারা মিরাপাড়া সহ হাবিবের বাইগুনি গ্রামের লোকজনের সোনাতলায় আসার পথ বন্ধ করে দেয়। বিপদে পড়ে পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে যারা সম্পূর্ণ রুপে সোনাতলার উপর নির্ভরশীল ছিল তারা হঠাৎ এই ধাক্কায় বিচলিত হয়ে পড়ে। দেখা দেয় নিত্য পণ্যের সংকট। সেই সময় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য হাবিবের বাইগুনি গ্রামের রাস্তার পাশে কাঁচা বাজার নিয়ে বসে কয়েকজন। ক্রমেই গড়ে উঠতে থাকে দোকান পাট। যা পরে করোনা বাজার নামে পরিচিতি পায়।

ওই এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্র আলভি জানান, হঠাৎ করে সোনাতলায় যাওয়া বন্ধ হলে পরিকল্পনা ছাড়াই এই বাজার গড়ে উঠে। এখন এই বাজারে পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষের প্রয়োজন অনেকটাই মিটে যায়।

করোনা বাজারের গালামালের দোকানী রাজু জানান, প্রথমে দুই এক জন প্রয়োজনী জিনিসপত্র নিয়ে বসলেও এখন অনেক দোকান হয়েছে। দোকানে বেচাকেনা ভালো হয়। বাইগুনি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আনিছুর রহমান আনিছ জানান, সকালের দিকে লোকজনের উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকে লোকজন। প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত লোকজনের আনাগোনা থাকে এই বাজারে।

শালমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদা আক্তার জানান, করোনাকালীন সময়ে মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে এই বাজারটি স্থাপন করেছে। এখনও এলাকার মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে চলেছে বাজারটি। ভবিষ্যতে এই বাজারটি আরও সমৃদ্ধ হবে এটা প্রত্যাশা করেন তিনি।