গাইবান্ধার মিঠুন এবারের কোরবানীর হাটের আকর্ষন

মানিক সাহা, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি জুলাই ২, ২০২১, ০৩:৩৭ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

গাইবান্ধাঃ গরুর নাম মিঠুন। ওজন প্রায় ৩৫মণ। এবারের কুরবানীর ঈদের গরুর হাটের অন্যতম আকর্ষন হতে পারে গাইবান্ধার মিঠুন। জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জিরাই গ্রামের জবেদ উল্যার ছেলে কৃষক শাহজাহান আলী পরম মমতায় ছোট থেকে লালন-পালন করেছেন মিঠুনকে।

মাত্র ১০ মাস বয়সে ছোট একটি বাছুর গরু হাট থেকে কিনে আনেন শাহজাহান। বাড়িতে আনার পর নাম রাখেন মিঠুন। পরম যত্ন আর সন্তান স্নেহে ৩ বছর যাবত লালন পালন করেছেন তাকে। কাঁচা ঘাস, ভূষি, খড় ইত্যাদির পাশাপাশি শুধু মাছ-মাংস ব্যতিত তিনি নিজে যা খান তাই খাওয়ান মিঠুনকে। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, ভাত, ডাল, সেমাই, রুটি।

শাহজাহান আলী দাবী করেন, গৃহপালিত প্রাণী হলেও নিজের সন্তানের মত করে লালন-পালন করেছি মিঠুনকে। গরমকালে ২৪ ঘন্টা তার জন্য ফ্যানের বাতাসের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিদিন নিজ হাতে গোসল করানো হয় এবং সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এভাবেই পরিচর্যা করতে করতে সেই ছোট্ট মিঠুন এখন ৩৫মণের বিশাল আকৃতির গরু। বড় খামার গড়ে তুলতে না পারলেও নিজের বাড়িতে ছোট্ট খামারে ২/৩টি গরু সব সময় পালন করেন শাহজাহান আলী। প্রায় প্রতিবছরই কুরবানীর ঈদে ২/১টি গরুও তিনি বিক্রি করেন। কিন্তু মিঠুনের মত গরু কখনই হয়নি তাঁর খামারে।  

নিজের সংসারের দৈনন্দিন খরচের পাশাপাশি প্রতিদিন মিঠুনের খাবারের জন্য খরচ করতে হয় ৬ থেকে ৭শ টাকা। তবুও বেশী লাভের আশায় মিঠুন দেয়া হয়নি মোটাতাজা করণের ইনজেশন বা দ্রুত বর্ধনের জন্য কোন ফিড খাওয়ানো হয়নি। প্রতিদিন বহু মানুষ কৃষক শাহজাহান আলীর বাড়িতে দেখতে আসেন মিঠুনকে। কেউ আবার মিঠুনের সাথে সেলফিও তোলেন।

গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিঠুনকে প্রতিপালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শাহজাহান আলীকে। তাই তিনি এই কুরবানীর ঈদেই বিক্রি করতে চান মিঠুনকে। এ পর্যন্ত মিঠুনকে বিক্রির জন্য কোন হাটে না তুললেও অনেক ক্রেতাই মিঠুনকে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ পর্যন্ত অনেক দামের মধ্যে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ১৭ লক্ষ টাকা মিঠুনের দাম দিতে চেয়েছেন। তবে শাহজাহান আলী ২৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে চান প্রিয় মিঠুনকে।

প্রতিবেদককে কৃষক শাহজান আলী জানান, একজন সন্তান লালন-পালন করে বড় হওয়ার পর বৃদ্ধ পিতা-মাতার অবলম্বন হয়। তেমনি মিঠুনকে বিক্রি করে সেই টাকায় সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চাই। শুধুমাত্র টাকার জন্য চিরদিনের জন্য হারাতে প্রিয় মিঠুনকে- একথা ভাবতেই খুব কষ্ট হয়।