চাষীদের দেড় কোটি টাকা পরিশোধ না করেই পাবনা চিনিকল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩, ২০২০, ১১:৩৪ পিএম

ঢাকাঃ আখচাষীদের পাওনা প্রায় দেড় কোটি টাকা পরিশোধ না করে প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর পাবনার দাশুড়িয়ায় স্থাপিত পাবনা চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করেছে চিনি শিল্প কর্পোরেশন।

চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করায় মিলের স্থায়ী-অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক ১ হাজার ২০০ শ্রমিক কর্মচারীসহ ৬ শতাধিক আখচাষী পড়েছেন বিপাকে। আখচাষীদের ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ  মাঠে পড়ে আছে।

এদিকে মিল বন্ধ ঘোষণা করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ ও মিল গেটের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন মিল এলাকার আখচাষী ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষীরা সুগার মিলের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশে কয়েকশ’ যানবাহন আটকা পড়ে।

সড়ক অবরোধকারীরা রাস্তায় শুয়ে ও বসে মিল বন্ধের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। আখচাষী ও শ্রমিক-কর্মচারীরা বলেন, পাবনা চিনিকলসহ ১৫টি চিনিকলে অন্তত সাড়ে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মচারী রয়েছেন। চিনিকল বন্ধ করার কারণে চাষী ও কর্মকর্তা- কর্মচারীরা সপরিবারে মানবিক সংকটে পড়তে যাচ্ছেন।

সাংসারিক সমস্যার পাশাপাশি তারা টাকার অভাবে অন্য ফসল পর্যন্ত চাষবাস করতে পারছেন না। তারা জানান, এখন আখ চাষের পরিচর্যা করার জন্য বাড়তি টাকা দরকার হচ্ছে। অথচ এ সময়ে তারা চিনিকলে আখ দিতে পারছেন না। অর্থাভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তারা চলতি মুজিববর্ষে চিনিকল বন্ধর মতো অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

কয়েকজন চাষী ও মিল শ্রমিক-কর্মচারী বলেন, চিনিকল বন্ধ ঠেকাতে তারা প্রয়োজনে আত্মাহুতি দেবেন।

তারা বলেন, বকেয়া বেতনসহ শ্রমিক-কর্মচারী ও চাষীদের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করতে হবে, মিলে আখমাড়াই শুরু করতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জানানো হয়, দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

এরপর দুপুর ১টার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কৃষক-শ্রমিকদের মহাসড়ক ছেড়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালনের আহবান জানালে শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে এসে মিলগেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন পাবনা সুগার মিলসহ ৬টি মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করে চিঠি দেয়। ৬টি চিনিকল বন্ধ ঠেকাতে পাঁচ দফা দাবিতে পাবনা সুগার মিলসহ চিনিকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষী ফেডারেশন যৌথভাবে গত কয়েক দিন ধরে চিনিকল এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল। এরই মধ্যে বুধবার মিল বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলসটি ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাড়াই মৌসুম চালু করে। বর্তমানে মিলটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনাগ্রস্ত। এতে স্থায়ী-অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০।

আগামীনিউজ/প্রভাত