দুপুরে ফের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবে শাবি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৯:১৮ এএম

সিলেটঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চলমান পরিস্থিতি নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভার্চুয়ালি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের গ্যালারি কক্ষে জুম প্ল্যাটফর্মে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রী নানা আশ্বাস দিলেও উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ফের আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন তারা। 

আলোচনা শেষে আড়াইটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের পক্ষে কথা বলেন সাব্বির হোসেন, নাফিসা আনজুম ও মোহাইমিনুল বাশার রাজ।

তারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় আমরা পুরো ঘটনাপ্রবাহ বলেছি। সব শুনে তিনি বলেছেন, এটা সমাধান করতে তো একটু সময় লাগতে পারে। আমরা যেন আপাতত অনশন বন্ধ করি এবং আলোচনা চালিয়ে যাই। আমাদের অনশনরত শিক্ষার্থীরা তখন শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন, আমরা একটি দাবিতেই থাকতে চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ভিসি পদত্যাগ না করবে আমরা অনশন চালিয়ে যাব। মন্ত্রী তখন আমাদের বলেছেন, আলোচনা চালিয়ে যাই। আমরা তাতে সায় দিয়েছি। 

তারা আরও বলেন, কাল হয়তো আবারো এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারে। দুপুর একটার পর শিক্ষামন্ত্রী ফ্রি হবেন। তখন আমরা আলোচনায় বসতে পারি। আলোচনার মাধ্যমে অন্য পথ বের করার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে আমরা বলেছি, এই ভিসির ক্যাম্পাসে থাকাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি। ভিসি না সরলে অনশন চলবে।

রাত সাড়ে বারোটার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। রাত একটার দিকে শাবিপ্রবির ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে আলোচনা মন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা শুরু হয়।

আলোচনায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

পরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের আইনগত ও অ্যাকাডেমিক সমস্যা যাতে না হয়, মন্ত্রী তা দেখবেন। তিনি আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন অনশন ভেঙে আন্দোলন থেকে সরে যান। তিনি আলোচনায় প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি সবকিছু শুনেছেন। 

নাদেল বলেন, রোববার শিক্ষার্থীরা যেন লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনশন ভাঙার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো কথা আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সবার সঙ্গে কথা বলে কাল আমাদের জানাবেন। ভিসিকে ছুটি দেওয়া বা অপসারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন- শাহরিয়ার আবেদিন, অপূর্ব, মীর রানা, সাব্বির, নাফিসা আনজুম ইমু, রোমিও, উমর ফারুক, ইয়াসির সরকার, সাদিয়া আফরিন ও মোহাইমিনুল বাশার রাজ। আলোচনার সময় বাইরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা-  এক দুই তিন চার ফরিদ তুই গদি ছাড়, সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান এক হও এক হও, পতন পতন পতন চাই ফরিদের পতন চাই, এক দফা এক দাবি ফরিদ তুই কবে যাবি- বলে স্লোগান দেন।

গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও সামনে আসে আন্দোলনে।

গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

১৯ জানুয়ারি বিকেলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে ২৩ জন শিক্ষার্থী। একই দাবিতে পরদিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকশো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করেন। অনশনে অসুস্থ ১৬ শিক্ষার্থী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া বাকিদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

আগামীনিউজ/বুরহান