কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৩, ২০২১, ০১:৫১ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

খুলনাঃ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

শুক্রবার দুপুরে কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভূঁঞা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

এতে উল্লেখ করা হয়, কুয়েটের ৭৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ড. সেলিম হোসেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় ৩ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো।

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর দুপুর ৩টার দিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কুয়েট শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন। তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ ছাত্র আবাসিক হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে। ঐ প্যানেলের সদস্যরা হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য।

তারই ধারাবাহিকতায়, ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি ক্যাডার গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধাঘণ্টা ঐ শিক্ষকের সঙ্গে  রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসের নিকটস্থ বাসায় যাওয়ার পর দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. সেলিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে কুয়েট। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমিতি আন্দোলনের নামে। ২ ডিসেম্বর শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন এবং প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ ৫ দফা দাবি তোলা হয়। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণেরও দাবি করা হয়।

শিক্ষক নেতারা বলেন, ৩০ নভেম্বর দুপুরে কুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন মারা যান। তিনি লালন শাহ ছাত্রহলের প্রভোস্ট ছিলেন। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর আগে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন ওই শিক্ষক।

লালন শাহ ছাত্রহলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে ছাত্র সংগঠনের কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তারা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিত তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য বলে তারা জানান।

শিক্ষক নেতারা আরও জানান, অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা না পর্যন্ত শিক্ষকরা সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন। শিক্ষক সমিতির গৃহীত যেকোনো ধরনের কর্মসূচির সময় শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি প্রসাশনিক কার্যক্রমও বর্জন করবেন।

ড. সেলিম হোসেনের পরিবারকে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য ন্যায্য অর্থনৈতিক সুবিধাসহ অতিরিক্ত ১ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভাইস- চ্যান্সেলর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে।

এ ব্যাপারে কুয়েট ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় ড. রজিবুল আহসানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগামীনিউজ/বুরহান