Dr. Neem on Daraz
Victory Day

পাকিস্তানে কেন্দ্র-প্রদেশ সম্পর্ক: ইমরান কেন ১৮তম সংশোধনীর পরিবর্তন চান


আগামী নিউজ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৪, ২০২০, ০২:২৭ পিএম
পাকিস্তানে কেন্দ্র-প্রদেশ সম্পর্ক: ইমরান কেন ১৮তম সংশোধনীর পরিবর্তন চান

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: সাউথ এশিয়ান মনিটর

পাকিস্তানের সাংবিধানিক পরিবর্তনের ইতিহাসে এক ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে অন্য ধরনের ব্যবস্থায় রূপান্তর ঘটেছে, এক ধরনের নির্বাহী ব্যবস্থা বদলে অন্য ধরনের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮তম সংশোধনীটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পরিবর্তন, যার আগে রয়েছে শুধু ১৯৭৩ সালের সংবিধান। তবে, ২০১০ সালে বিরল সর্বদলীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে যেখানে এই সংশোধনীটি উত্থাপন ও পাস হয়েছিলো, সেখানে বিগত কয়েক বছর ধরে সেটাকে পাল্টে দেয়ার বা ‘সংশোধনীর সংশোধনী আনার’ রাজনীতি চলছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন ‘কেন্দ্রপন্থী’ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই তৎপরতা শুরু হয়েছে। 

১৮তম সংশোধনী ১৯৭৩ সালের সংবিধানকে ছাপিয়ে গেছে এবং এটার মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রদেশগুলোর দীর্ঘদিনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিই শুধু পূরণ করা হয়নি, বরং বিপুল পরিমাণ আর্থিক সম্পদ কেন্দ্র থেকে প্রদেশগুলোতে হস্তান্তর করা হয়েছে। কনকারেস্ট লিস্টের বিলুপ্তি – যেটা প্রদেশগুলোকে অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছিলো এবং কেন্দ্রের উপর থেকে নির্ভরতা অনেক কমিয়ে দিয়েছিলো, সেটা আবারো এখন আলোচনায় এসেছে। 

প্রদেশগুলোতে অধিকাংশ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর, এটা স্বাভাবিক ছিলো যাতে আর্থিক সম্পদও সেখানে হস্তান্তর করা হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণেই ২০১০ সালে ৭ম ন্যাশনাল ফিনান্স কমিশন (এনএফসি) অ্যাওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়। এনএফসি একটি ফর্মুলা নিয়ে আসে, যেটা অনুসারে আর্থিক সম্পদ কেন্দ্র আর প্রদেশগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হবে। ৭ম এনএফসি অ্যাওয়ার্ডের আগে, দেশের আর্থিক সম্পদের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতো কেন্দ্র। ২০১০ সালের পর থেকে, প্রদেশগুলো এই সম্পদের প্রায় ৫৮ শতাংশ পেয়েছে। ফলে কেন্দ্রের অংশ এখানে ব্যাপকভাবে কমে গেছে। 

ক্ষমতাসীন পিটিআই সরকারের মতে, এই ব্যবস্থাপনার কারণে কেন্দ্র প্রায় ‘দেউলিয়া’ হয়ে পড়েছে। পিটিআই মনে করে, কিছু সম্পদ শুধু কেন্দ্রে ফিরিয়ে দেয়ায় উচিত নয়, বরং এনএফসি অ্যাওয়ার্ডও পুনর্বিবেচনা করা উচিত। 

১৮তম সংশোধনী বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে কারণ এটার মাধ্যমে এনএফসিকে সাংবিধানিক সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। প্রদেশগুলোর অংশ সপ্তম এনএফসি অ্যাওয়ার্ডে বর্ণিত অংশের চেয়ে কম হতে পারে না। অন্যভাবে বললে, প্রদেশগুলো যদি আজকে ৫৮ শতাংশ শেয়ার পেয়ে থাকে, তাহলে ৮ম এবং পরবর্তী এনএফসি অ্যাওয়ার্ডগুলোতে সেটা ৫৮ শতাংশের কম হতে পারে না। সে কারণে সংশোধনীর এই অংশটি সংশোধনের জন্য কেন্দ্র চেষ্টা করছে যাতে কেন্দ্রের দিকে আরও সম্পদের প্রবাহ যেতে পারে। 

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল পিটিআই ২০১০ সালে পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলো না, যখন এই সংশোধনী গৃহিত হয় এবং এনএফসি অ্যাওয়ার্ড পাস করা হয়। পাকিস্তানে যে বহু দশকের পুরো ‘কেন্দ্র-প্রদেশ’ বিতর্ক চলে আসছে, সেটা সমাধান করার পথে এটা কার্যত কোনো অবদান রাখেনি। এখন ১৮তম সংশোধনী ‘রিভিউ’ করার জন্য যে দাবি উঠেছে, তার কারণ হলো পিটিআইয়ের ‘কেন্দ্রমুখী’ প্রবণতা। 

পিটিআই-এর যেহেতু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এবং এই ধারণাও রয়েছে যে সেনাবাহিনী চরম কেন্দ্রীভূত প্রতিষ্ঠান এবং সবসময় তারা পাকিস্তানকে চরম কেন্দ্রমুখী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শাসন করে এসেছে, সে কারণে উভয়ের মধ্যে এ ব্যাপারে অভিন্ন স্বার্থ থাকতে পারে। সে কারণেই ১৮তম সংশোধনীকে যে কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ- এন’র এই প্রবল বিরোধিতা। 

এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৮তম সংশোধনীর শিকড় ছড়িয়ে আছে অনেক গভীর দ্বি-দলীয় ঐক্যমতের মধ্যে, যেটা হয়েছিলো ২০০৫ ও ২০০৬ সালের মধ্যে, যখন পিপিপি এবং পিএমএল-এন’র কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাসনে ছিলেন এবং পরস্পরের মধ্যে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাসের ইতি টানার জন্য তারা নিজেদের মধ্য দূরত্ব কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতাতেই বিখ্যাত ‘চার্টার অব ডেমোক্র্যাসি’ স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। ২০০৬ সালে লন্ডনে এটা স্বাক্ষর করেছিলেন (প্রয়াত) বেনজির ভুট্টো এবং নওয়াজ শরীফ।

যে সব কারণে পিটিআই এনএফসি ও ১৮তম সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেছে, তার একটি কারণ হলো বিগত দুই বছরে পাকিস্তানের চরম দুর্বল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে কেন্দ্র আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে। একই সাথে, এটা বাস্তবতা যে, বেশ কিছু বিষয় প্রদেশগুলোর কাছে হস্তান্তর করার পরও কেন্দ্র এখনো স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়ে মন্ত্রী পুষছে, যেগুলো শক্তভাবে বললে কেন্দ্রের আওতায় পড়ে না। একই সাথে, বিভিন্ন ধরনের দাবি করা সত্বেও পিটিআই সরকার করের ভিত্তি বাড়াতে বা অপ্রয়োজনীয় ব্যায় কমাতে খারাপভাবে ব্যর্থ হয়েছে। 

পিটিআইয়ের যুক্তি হলো কেন্দ্রীয় বাজেটের বড় একটা অংশ ঋণ পরিশোধে ব্যায় হয়ে যাচ্ছে, যেটার কারণ হলো উচ্চ হারে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়া। যেখানে সবগুলো প্রদেশ জাতীয় বাজেট থেকে প্রায় ৫৮ শতাংশ নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে চারটি প্রদেশ একসাথে মিলে আইএমএফকে দেয়া আর্থিক লক্ষ্যমাত্রার প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য কেন্দ্রকে ২০১৯ সালের প্রথম কোয়ার্টারে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ২০২ বিলিয়ন রুপি উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়েছে। কেন্দ্রের কাছে যে বহু বিলিয়ন ‘অব্যবহৃত উন্নয়ন তহবিল’ ফেরত গেছে, সেটার বাইরে এই অর্থ দেয়া হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, বিভিন্ন সমস্যাগুলো একসাথে হয়ে ১৮তম সংশোধনীর বিষয়ে বিতর্কটা তৈরি হচ্ছে। 

কেন্দ্র যেখানে তার ব্যর্থ অর্থনৈতিক নীতি এবং বিপুল ঋণের কারণে পর্বত প্রমাণ আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, সেখানে প্রদেশগুলোকে দোষারোপ করাটা কোনো সমাধান হতে পারে না। এখানে পরিহাসের ব্যাপার হলো ক্ষমতাসীন পিটিআই এখন শুধু কেন্দ্রেই শাসন করছে না, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশেও এখন সরকার রয়েছে তাদের। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।

লেখক: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী,পাকিস্তান।

আগামীনিউজ/বিজয়

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে