Dr. Neem on Daraz
Victory Day

‘দীপশিখা মেটি স্কুল’ একটি শৈল্পিক নিদর্শন


আগামী নিউজ | দিপংকর রায়, দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২১, ০৬:০৩ পিএম
‘দীপশিখা মেটি স্কুল’ একটি শৈল্পিক নিদর্শন

ছবিঃ আগামী নিউজ

দিনাজপুরঃ শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার পিচ ঢালাই রাস্তা। বোচাগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে মঙ্গলপুর পৌছালে দীপশিখার অবস্থান জানতে চাইলে পথ দেখিয়ে দেবে সবাই তবে এলাকায় দীপশিখার গনআলয় নামে বেশ পরিচিত। 

ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পাওয়া যায় প্রকৃতির সাথে মিশে কাদা মাটির তৈরী দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা গুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শনার্থীদের মনমুগ্ধ করে আত্মতৃপ্তি দেয়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দর্শনার্থী প্রকৃতির সাথে এই স্থাপনা গুলোর মেলবন্ধন দেখতে ভিড় জমায়। গ্রামীন প্রাকৃতিক মনোরমপরিবেশ দীপশিখার গেট পর্যন্ত গেলেও বুঝার উপায় নেই।

"দীপশিখা মেটি স্কুল" বাংলাদেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেটি  দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নের রুদ্রপুরে অবস্থিত।

জার্মানির "শান্তি" নামের এক দাতাসংস্থার অর্থায়নে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে "মেটির " মাটির স্কুলঘর নির্মাণ শুরু হয়। জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে ১৯ জন স্থানীয় শ্রমিক ইমারতটি নির্মাণের সাথে যুক্ত ছিলেন। জার্মান স্থপতি অ্যানা হেরিঙ্গার ও এই কে রোওয়ার্গ এই ইমারতটির নকশা করেন। ২০০৮ সালে মাটির এই ইমারতটি আগা খান স্থাপত্য পুরষ্কার লাভ করে। এছাড়া, আনা হেরিংগার ২০০৯ সালে ইমারতটি নকশা করার জন্য "কারি স্টোন নকশা" পুরষ্কারে ভূষিত হন।

ইমারতটির ৯ ফুট উচ্চতার ওপরে প্রথম তলায় ছাদ হিসেবে বাঁশ বিছিয়ে ও বাঁশের চাটাই দিয়ে মাটির আবরণ দেওয়া হয়েছে। ১০ ফুট উচ্চতার ওপরে দোতলার ছাদে বাঁশের সাথে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাঁশ দীর্ঘস্থায়ী করা হয়েছে। ওপরে বৃষ্টির পানি প্রতিরোধ করার জন্য দেওয়া হয়েছে টিন। কোথাও ইট ব্যবহার করা না হলেও ঘরের কাঠামো হিসেবে ইট ব্যবহার করা হয়েছে।

ইমারতটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বালু ও বাঁশ, দড়ি, খড়, কাঠ, টিন, রড, ইট ও সিমেন্ট। মাটি ও খড় মেশানো কাঁদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর দেয়াল দেয়ালের ভিতের ওপর দেওয়া হয়েছে আর্দ্রতারোধক। ইমারতটির দেয়ালের প্লাস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি ও বালু। মেঝের প্লাস্টারের জন্য পামওয়েল ও সাবানের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ইমারতটিতে বাইরে থেকে প্লাস্টার করা হয় নি। ভবনটির আয়তন ৮,০০০ বর্গফুট। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৭ লাখ টাকা।

"দেশী ভবন"

দ্বিতল ভবন, কক্ষ ৭ টি আয়তন ২৭৯০ বর্গফুট ভবটি দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে  ব্যাবহার করা হয়।  স্থাপনাটি ২০০৮ ইং সালে জার্মান স্থপতি অ্যানা হেরিঙ্গার তত্ত্বাাবধানে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে ১৮ জন স্থানীয় শ্রমিক  ইমারতটি নির্মাণের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই ইমারতটি নির্মাণেও ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বালু ও বাঁশ, দড়ি, খড়, কাঠ, টিন, রড, ইট ও সিমেন্ট। মাটি ও খড় মেশানো কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর দেয়াল দেয়ালের ভিতের ওপর দেওয়া হয়েছে আর্দ্রতারোধক।

ইমারতটির দেয়ালের প্লাস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি ও বালু। মেঝের প্লাস্টারের জন্য পামওয়েল ও সাবানের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ইমারতটিতে বাইরে থেকে প্লাস্টার করা হয় নি। ২০০৯ সালে prix solaire sussie, সুইজারল্যান্ড এবং ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কমিউনিটি এ্যাওয়ার্ড লাভ করে।

"আনন্দালয়" ভবনটি প্রতিবন্ধীদের পূনর্বাসন সেবা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নকশা ও স্থপতি আন্না হেরিংগার, (জার্মানি) দ্বিতল এই ভবনটি  আয়তন ৫৫০০ বর্গফুট, ঘর ৭ টি ২০১৮ সালে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্থানীয় ২৫ জন শ্রমিক ৯ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভবনটি নির্মান সম্পন্ন করেন। পরিবেশ বান্ধব এই স্থাপনাতেও উপকরণ হিসেবে মাটি, খড়, বালু, বাশ, দড়ি, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে।

ভবনটি দীর্ঘ স্থায়ী করতে সীমিত পরিমানে ইট, সিমেন্ট, রড, টিন ব্যবহার করা হয়েছে। মাটি ও খড় মেশানো কাদা দিয়ে দেয়াল বানানো হয়েছে। দেয়ালে  প্লাষ্টার হিসেবে মাটি ও বালুর ব্যবহার করা হয়েছে। মেঝেতে পাম ওয়েল ও সাবানের পেষ্ট দিয়ে প্লাষ্টার করা যা ওয়াটারপ্রুফ হিসেবে কাজ করে। বাইরের দেয়ালে প্লাষ্টার না থাকায় ভেতরের এই প্লাষ্টার চোখে পরার মত।      

নির্মাণ শৈলী ও প্রকৃতি বান্ধব বিবেচনায় হেনরিক  ফ্রোড ওবেল ফাউন্ডেশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি "দি ওবেল এওয়ার্ড ২০২০" লাভ করে।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে