Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনায় মারা না গেলেও না খেয়েই মারা যাবো আমরা


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২১, ১২:৪৬ পিএম
করোনায় মারা না গেলেও না খেয়েই মারা যাবো আমরা

ঢাকাঃ বছর না ঘুরতেই আবার অনিশ্চয়তায় খেটে খাওয়া মানুষ। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর শঙ্কা ভর করছে তাদের চোখে মুখে। ২০২১ এর আগমনের বিষ মোচনের যে স্বপ্ন বুনেছিলেন- তা ফিঁকে হয়েছে চলমান লকডাউনকে সামনে রেখে। কপালের ভাজ বাড়াচ্ছে, গেলো বছেরে এক বছরে নেয়া ঋণের বোঝা। পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রমজীবীদের সুরক্ষার বিষয় বিবেচনা ও গঠনমূলক পরিকল্পণার পরামর্শ অর্থনীতিবীদদের।

খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কষ্টের দিনলিপি এখনো জীবিত চোখের সামনে।এখনো অভাব আর অপ্রাপ্তির খাতাও দীর্ঘ হচ্ছে কারো কারো।, অথচ, বছর না ঘুরতেই আবারও সামনে এসেছে নিষ্ঠুর বাস্তবতা।

ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখা যায় শ্রমজীবী মানুষের কঠিন পরিস্থিতি। কয়েকজন সাধারণ দিনমজুর আগামী নিউজকে বলেন, ‘করোনায় মারা না গেলেও, ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমরা না খেয়েই মারা যাবো। আমরা গরিব মানুষ, তাই আমাদের কাছে পেটের চিন্তাই বড় চিন্তা।

আজ (১৭ এপ্রিল) শনিবার, লকডাউনে রিকশা চালানো বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার হারুনুর রশিদ, লোকমান মিয়া ও মনজু শেখ নামে কয়েকজন দিনমজুর রিকশাচালক।
 
হারুনুর রশিদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি। তিনি রায়ের বাজারে ইনসার আলির গ্যারেজে থাকেন। ৫৯ বছর বয়সী এই রিকশাচালকের পরিবারের সদস্য চারজন। তারা সবাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন, শুধু জীবিকার তাগিদেই এই বয়সেও হারুনকে পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকতে হয়।  
 
চাঁদপুরের বিল্লাল হোসেন ঢাকায় থাকেন মিরপুর-১০ নম্বরে। স্ত্রীসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে তিনি পরিবার চালান।
 
লকডাউনে সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ, সংসার কীভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মতো গরিব মানুষের কথা কেউ ভাবে না। আমাদেরতো আর ব্যাংকে লাখ লাখ টাকা নেই যে কাজ কাম না থাকলে সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাবো। একদিন গাড়ি বন্ধ রাখলে বাড়িতে চুলা জ্বলে না, ধার-কর্জ করে চলতে হয়। এই লকডাউন কয়দিন থাকবে, কে জানে। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ, সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
 
আজিমপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর যাতায়াত করা বিকাশ পরিবহনে দিনে ৫শ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন শাহাদত হোসেন। তার কাছে লকডাউনে কীভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন বাসের হেলপারি করে ৫শ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে নিজে চলি, আর বাড়িতে টাকা পাঠাই। বাস না চলায় আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আমাদের সংসার চালানোও কঠিন হয়ে পড়ছে।  
 
ভাটারা এলাকায় মুচির কাজ করেন বেরাইদ নিবাসী গৌরাঙ্গ দাস। তিনি বলেন, এবারের লকডাউন হচ্ছে। কাউকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। আমার এই কাজের উপরে ছয়জনের সংসার চলে। কাজ বন্ধ থাকলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এই করোনা যেন তাড়াতাড়ি দেশ থেকে বিদায় হয়, এই দোয়াই করি।
 
একই এলাকায় মুচির কাজ করেন নিখিল দাস। লকডাউন সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের লকডাউনে সবকিছুই সরকার বন্ধ করে দিসে। আমাদেরও কাজ বন্ধ। একদিন কাজ না করলে আমাদের মুখে খাবার জোটে না, তাই লকডাউনে আমার মতো কম আয়ের লোকদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। লকডাউনে আমাদের কাজ বন্ধ থাকলে, আমরা কীভাবে সংসার চালাবো সেই চিন্তাতেই আমাদের জীবন এখনই প্রায় শেষ।
 
শুধু হারুনুর রশিদ, লোকমান মিয়া, মনজু শেখ কিংবা গৌরাঙ্গ দাস নয়, অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনে এসব দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের সংসার কীভাবে চলবে, সেটাই এখন তাদের বড় চিন্তার বিষয়। একই সঙ্গে দেশ থেকে দ্রুত যেন এই করোনা মহামারি বিদায় হয়, সবকিছুই যেন আবারও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে সেই কামনাও করেন তারা।

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে