Dr. Neem on Daraz
Victory Day

হেফাজতিদের জন্য শান্তিতে নামাজ আদায় করতে পারছেন না মানুষ!


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২১, ০৫:১৯ পিএম
হেফাজতিদের জন্য শান্তিতে নামাজ আদায় করতে পারছেন না মানুষ!

ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ মৌলবাদী হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে বায়তুল মোকাররমে শান্তি মতো নামাজ আদায় করতে পারছেন না সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।

শুক্রবার এলেই মসজিদে ইট-পাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা! এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সাধারণ মুসল্লিারা। নামাজের সালাম ফিরাতেই আল্লাহ আকবার বলে চেঁচিয়ে উঠে তারা, সমস্ত নামাজ আদায় না করেই এবং সুন্নত নামাজ না পড়েই হাউ-কাউ চেঁচামেছি শুরু করে, এতে করে সাধারণ মুসল্লিরা সুন্নত নামাজ আদায় করতে বিঘ্নতা ঘটে। বায়তুল মোকাররমের মুসল্লিরা সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকে হেফাজতের তাণ্ডবে।

আজ (২৯ মার্চ) রবিবার, বায়তুল মোকাররম মসজিদ ঘুরে কয়েকজন মুসল্লির সাথে কথা বলে জানা যায়, হেফাজতের কর্মীরা জুতা পড়েই মসজিদে প্রবেশ করে এবং নামাজ শেষে বর্বর ভাবে সেই জুতা পুলিশ ও সাধারণ মানুষকে লক্ষ করে নিক্ষেপ করে।

শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে নামাজ আদায় করতে আসা দুজন ব্যক্তির দু’টি মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় হেফাজতী মৌলবাদীরা। ভাঙ্গা হয় নিউজ টুয়ান্টিফোরের গাড়িও।

গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের সালাম না ফিরাতেই গন্ডগোল ও মারামারি বাধিয়ে দেয় হেফাজতিরা, মোদী বিরোদী স্লোগান দিয়ে শুরু হয় পুলিশের উপর আক্রমন। নামাজের দৃষ্টাব হয় এমন মানবিক কারণে সাধারণ মুসল্লিারা প্রতিবাদ করলে মুসল্লিদের ধরে মারধোর করেন মৌলবাদী হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা, এতে প্রায় ১০ জন মুসল্লি আহত হয় তাদের লাঠির আঘাতে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রায় ২০ বছর ধরে নমাজ আদায় করেন মো: ইসহাক, তিনি আগামী নিউজকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত বর্বর আচরণ করেন শুক্রবারসহ প্রায় প্রতিদিনই।

তাদের জন্য আমরা নামাজ আদায় করতে পারছিনা শান্তিতে, তারা ঠিক মতো নামাজ না পড়েই হড্ডগোল বাধিয়ে দেয়, মানুষ কিছু বললে মানুষকে মারতে আসে।  মো: ইসহাক বলেন, রিক্সায় করে ইট ও লাঠির বস্তা নিয়ে এসে মসজিদের বারান্দায় রেখে দেয়, তারপর শুরু করে আক্রমণ পুলিশ ও সাধারণ মানুষের উপর।

শাপলা চত্বর দেশের রাজনীতিতে একটি ‘অশনি সংকেতবাহী’ এলাকা। কথিত ১৩ দফার দাবিতে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে যে মধ্যযুগীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল, সেটির মানসিক আঘাত দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ এখনও ভুলতে পারেনি বলেই অনুমেয়। ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের মতো মানবসভ্যতার পরিপন্থী, উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড সমকালীন বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক সমাজেই তেমন একটা দেখা যায় না। হেফাজতে ইসলামের ৫ মে সমাবেশের নামে জঙ্গিপনার মতো দুটি উদাহরণ চোখের সামনে ভাসে– এর একটি ঘটেছিল তালেবান দ্বারা ১৯৯৫ সালে আফগানিস্তানের হেরাতে এবং অন্যটি জঙ্গিদের আদর্শিক অনুপ্রেরণার সংগঠন মুসলিম ব্রাদার্স হুড দ্বারা ২০১৩ সালে মিসরে।

যারা ধর্মের দোহাই তোলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে এরা ১৯৭১সালের স্বাধীনতা বিরোধী এবং পাকিস্তানীদের দোষর। এই স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদি গোষ্ঠি বিভিন্ন সময় ধর্মকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করতে চাইছে। এরা ১৯৭১ সালে আলবদর, রাজাকার ও আলসামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানীদের সাথে নিয়ে গণহত্যা চালিয়ে ছিল। পরবর্তিতে এদেরই একটি অংশ আফগান বিপ্লবে অংশ নেন এবং এদের দ্বারাই গড়ে উঠে হেফাজতে ইসলাম। এই হোফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলাটিম ও নব্যজেএমবি‘র সদস্যদের সকলেই আফগান ফেরত তালেবান।

‘অরাজনৈতিক’ সংগঠনের তকমা লাগিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ। তবে ২০১১ সালে ঘোষিত ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’র বিরুদ্ধে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলেছিল প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। আর ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর ‘আস্তিক-নাস্তিক’ ইস্যুতে ‘সহিংস’ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে কওমি মাদরাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি।

সে বছরের ৪ এপ্রিল ও ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে স্মরণকালের ‘ভয়াবহ’ সহিংস কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদের চূড়ান্ত মহড়া প্রদর্শন করে হেফাজতে ইসলাম। রাজনৈতিক ফায়দা লাভের আশায় তাদেরকে প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা দেয় রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। আর নেপথ্য থেকে মূল কলকাঠি নাড়ে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত।

তবে সরকারের কৌশলী ও কঠোর পদক্ষেপের কারণে ২০১৩ সালের ৫ মে’র পর ধীরে ধীরে শক্তিহীন হয়ে পড়ে হেফাজত। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফী ও তার অনুসারীরা সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে নেন। আর হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার অনুসারীরা ‘অনুচ্চস্বরে’ সরকারবিরোধী অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে