Dr. Neem on Daraz
Victory Day

নাম প্রাইভেট চলে ভাড়ায়


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম
নাম প্রাইভেট চলে ভাড়ায়

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ ঢাকার রাজপথে এখন যত্রতত্র দেখা মেলে অ্যাশ বা ছাই রঙা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বা সংক্ষেপে যাকে সিএনজি বলে চিনি আমরা। পাবলিক এই ট্রান্সপোর্টটি যখন ভাড়ায় চালিত হয় তখন তার অনুমোদিত রঙ সবুজ, কিন্তু সাধারণ কেউ প্রাইভেট হিসাবে এটা ব্যবহার করলে প্রাইভেট লিখে গায়ের রঙ ছাই করে নেয়। প্রাইভেট লেখা হলেও সেগুলোর অধিকাংশ আদতে প্রাইভেট নয়, বরং প্রাইভেট নামের আড়ালে আর সকল সবুজ সিএনজির মতই ভাড়ায় চালিত। ভাড়ায় চালিত সিএনজির অনুমোদন দেয়া হয়না  তাই এই প্রাইভেটের আইনী ফাঁকটিকে ব্যবহার করছেন একদল এ দেশীয় অতি বুদ্ধিমান।

মিরপুরের কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো একজন  সাধারণ সিএনজি চালক বললেন, প্রায় প্রতিদিনই ধূসর রঙের প্রাইভেট লেখা নতুন সিএনজি রাস্তায় নামছে ভাড়ায় যাত্রী বহনের জন্য। প্রাইভেট লেখা একটি কৌশল। প্রাইভেট লেখা থাকলে রুট পারমিটের প্রয়োজন হয় না। সরকারকে রুট পারমিটের রাজস্বও দিতে হয় না। মিটারের যাত্রী বহনের দায়ও থাকে না। এ কারণে নতুন নতুন প্রাইভেট সিএনজি রাস্তায় নামছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী শহরে ভাড়ায় যাত্রী বহন করছে প্রায় পাঁচ হাজার প্রাইভেট সিএনজি। যাত্রীবাহী সিএনজির চেয়ে প্রাইভেট সিএনজির রেজিস্ট্রেশন পাওয়া সহজ বলে পরিবহন ব্যবসার জন্য মালিকরা প্রাইভেট সিএনজির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অবৈধভাবে ভাড়ায় যাত্রী বহন করে চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রাইভেট সিএনজির যাত্রী বহন দেখেও না দেখার ভান করে।

প্রাইভেট লেখা সিএনজির প্রায় নব্বই ভাগের মালিক পুলিশের লোক। মিটার রিডিং অনুসারে ভাড়া নেয়ার বিধান আছে যাত্রীদের কাছে থেকে। সে আইন মানে না বেশি ভাগ সিএনজিচালক। ভাড়া নেয় ইচ্ছেমতো। সম্প্রতি সময়ে রাজধানী শহরের বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিকের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে মিটার ছাড়া যাত্রীবহন হচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য। ভাড়ায় যাত্রী বহনের অনুমতিপ্রাপ্ত সিএনজিগুলো মাঝে-মধ্যে চেক করে পুলিশ কিন্তু রুট পারমিটহীন প্রাইভেট সিএনজিগুলোকে চেক করা হয় না।

জানা গেছে, ওই সব প্রাইভেট সিএনজির বেশির ভাগের মালিক ঢাকায় কর্মরত পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা বলে সেগুলোর দিকে নজর দেয় না পুলিশ। একটি সিএনজি ঢাকা শহরে নামাতে বর্তমানে খরচ প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা সেখানে প্রাইভেট নামধারী (অবাণিজ্যিক) সিএনজি নামাতে খরচ ৪ লাখ টাকার কিছু ওপরে। আর এই সুযোগেই অ্যাশ কালারের এসব প্রাইভেট সিএনজি চালিত অটোরিকশা সবুজ রং করে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। সম্প্রতি সিএনজি চালিত অটোরিকশার মিটারে না যাওয়া এবং চুক্তি ভাড়া আদায় রোধ করার লক্ষ্যে পরিচালিত বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকটি প্রাইভেট অটোরিকশা আটক করে। তবে প্রাইভেট চালিত সিএনজি শুরু রং পরিবর্তন করে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করলেও এর বিরুদ্ধে পুলিশের কোন অ্যাকশন কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিচালনা লক্ষ করা যায়নি।

জানতে চাইলের রাসেল নামের এক চালক জানান, প্রাইভেটের কারণে শহরে চলতে সমস্যা হয় না। মালিককে প্রতিদিন এক হাজার টাকা জমা দিতে হয়। মিটার না থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে এসব চালক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দ ১১ ০৮ ৯৪ নম্বরের গাড়ির চালক বলেন, আমাদের কিছুই ঠিক নাই। ঠিক থাকলেও পুলিশকে টাকা দিয়েই ঢাকায় গাড়ি চালাতে হয়। প্রতিটি চেকপোস্টেই আমাদেরকে টাকা দিয়েই চলতে হয়। বর্তমানে বাজার ভালো না। যা ইনকাম করি তার অনেকটাই পুলিশকে দিতে হয়।

ঢাকা দ ১৪-০১-৩৯ নম্বরের গাড়িটিও প্রাইভেট রেজিস্টেশন করা। কিন্তু চালাচ্ছেন বাণিজ্যিকভাবে। জানতে চাইলে এর চালক ফারুক বলেন, প্রতি মাসে ট্রাফিকদের টাকা দিতে হয় এজন্যই লোকাল চালাতে পারি।

বিআরটিএ'র হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা ১৩ হাজার। তবে যাত্রীবাহী সিএনজির নিবন্ধনের সঠিক সংখ্যার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিকের এক উপ-পুলিশ কমিশনার  বলেন, বর্তমানে প্রাইভেট অটোরিকশা বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের একদমই সুযোগ নেই, এটা আইনগতভাবে অবৈধ। আমাদের নজরে আসলে সাথে সাথে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি, করা হচ্ছে মামলা। 

অবৈধ প্রাইভেট ও বাণিজ্যিক অটোরিকশার মালিকানায় ট্রাফিক পুলিশসহ এ বিভাগের দায়িত্বরতরা জড়িত রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, আমি এটা নিয়ে অবগত রয়েছি যে মালিকানায় পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ প্রভাবশালীরাও জড়িত আছেন। তবে আইন সবার জন্য সমান। আমার এলাকায় এসব অটোরিকশা চলালে তার মালিক যেইহোক না কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর রোড সেফটির পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, আমাদের হিসেব মতে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে। প্রাইভেট অটোরিকশা বাণিজ্যিকভাবে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে চলাচলের বিষয়টি নিয়ে আমাদের মোবাইল কোর্ট নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। তবে প্রাইভেট অটোরিকশা সর্বশেষ কি পরিমাণ চলাচল করছে তা সঠিক জানাতে পারেননি তিনি।

আগামীনিউজ/এএইচ  

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে