বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় ২১ মাস হয়ে গেলো কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু কোনো আন্দোলন কর্মসূচি এখনো পর্যন্ত দিতে পারেনি দলটি। বরং ঈদের পর, শীতের সময় আন্দোলনে যাবে বলে বারবার সিদ্ধান্ত নিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
নির্বাচনের আগে দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই তার নির্বাচনে যাবো; কিন্তু সে প্রতিশ্রুতিও নেতারা রাখতে পারেন নি। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজপথে প্রচার-প্রচারণাকেই এখন আন্দোলনের বিকল্প পথ দেখছে।
এ বিষয় নিয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মান্না আগামী নিউজ ডটকমকে বলেছেন, ‘বিএনপি তো আসলে চায়নি আন্দোলন। তারা চাইলে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারতো। কিন্তু তা করেনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব নিজেই তো ঘোষণা করেছেন যে বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নয় তারা জনগণকে সংগঠিত করবে। কিন্তু সেটাও আর হচ্ছে কোথায়। তবে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের বিকল্প পথ তৈরি হতে পারে। সেটার জন্যও বিএনপিকে ভাবতে হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষ মাঠে নামলেই হবে না; বিজয়টা কীভাবে আসবে তা নিয়ে ভাবনার বিষয় রয়েছে অনেক।’
দলটির মিছিল-মিটিং, সমাবেশ বা আন্দোলনে একসময় রাজপথ কাঁপত। আর বর্তমানে দলটির কার্যক্রম ঘুরপাক খাচ্ছে সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা সভা ও বিবৃতির মধ্যে। দলের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, সরকার বিরোধীদলকে দমন করছে। সরকারের বাধার কারণেই বিএনপি মাঠে নামতে পারছে না।
সম্প্রতি কয়েকবার সমাবেশ করার উদ্যোগ নিলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা ব্যর্থ হয়।
ঢাকা সিটি নির্বাচনে দুই প্রার্থী বারবার বলেছেন নির্বাচিত হলে তারা দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেন। তারা গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সহ-সম্পাদক নিলুফার মনি চৌধুরী আগামী নিউজ ডটকমকে বলেছেন, ‘সর্বহারাদের তো আর নতুন করে কিছু হারানোর ভয় থাকে না। যেহেতু নির্বাচনক ঘিরে নেতাকর্মীদের সমাবেশ ঘটেছে তাই এটাকেই কাজে লাগানো উচিত নেতাদের। ঘরে ফেরার দরকার কি? এই গণজোয়ারকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি চেয়ারর্পাসনের মুক্তির পথ খোঁজা উচিত নেতাদের। নেগেটিভের মধ্যে পজেটিভও কিছু খোঁজা উচিত বলে মনে করি।’
এ অবস্থায় বিএনপির ভবিষ্যৎ কী? সে প্রশ্ন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূলেও। শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি কিছু না বললেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ ঝেড়ে চলেছেন নেতাদের ব্যর্থতার কথা। তবে তারা রাজপথে প্রচার -প্রচারণায় অংশ নিতে পেরে স্বস্তিও পাচ্ছেন। আন্দোলনে নতুন আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছেন।
একাধিকবার সরকার চালানো বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হলে সবার মুখেই হতাশা লক্ষ্য করা যায়। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেই ফেলেন, কোনো কূল-কিনারা কেউ দেখাতে পারছেন না। যদিও সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বলে ওঠেন, বিএনপি শেষ হয়ে যায়নি। বিএনপি আবারও ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে
ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর থেকে বলতে গেলে বিএনপর রাজপথে বা মাঠে কোনো দলীয় কার্যাক্রম নেই।
বর্তমানে বিএনপির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় কিংবা নয়াপল্টনের দলীয় অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে। সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী দলের কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে রাজপথের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত আলোচনা সভা করছে দলটি। কিন্তু রাজপথে কোনো কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না একসময় মাঠ কাঁপানো আন্দোলনে থাকা এই দলটির।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর ‘রাতে ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ করে প্রথমে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি। এরপর বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন না জানালেও পরে ঠিকই তারা সংসদে যান। এই নাটকীয়তার মধ্যে বিগত আট মাস কেবল ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তুলেই পার করলো দলটি।
যদিও এই অভিযোগের পক্ষে রাজপথে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
সেই ব্যর্থতা নিয়ে খোদ দলের সিনিয়র নেতাদের মুখেই বিভিন্ন সময় হা-হুতাশ শোনা গেছে।
ভরাডুবির নির্বাচন শেষে আন্দোলন কর্মসূচি ছাড়া মাসের পর মাস পেরোতে থাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলছেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
লক্ষাধিক মামলায় ২৬ লাখ আসামি আর শতশত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হলেও একজন কর্মীও দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেননি। দলের নেতাকর্মীরা এখনো ঐক্যবদ্ধ থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন। লড়াই করেই নেত্রীকে মুক্ত করা হবে।
এসব বিষয়ে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, নেত্রীর জন্য কে কর্মসূচি ঘোষণা করবে? যারা কর্মসূচি দেবে তারা আদৌ নেত্রীর মুক্তি চায় কি-না সেটাও তো দেখতে হবে। বিএনপি কোন পথে?
এমন প্রশ্নের জবাবে দলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, সরকারের দমন-পীড়ন, নির্যাতনে নেতাকর্মীরা দিশেহারা। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সংগঠনকে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। যেসব জেলা কমিটি দুর্বল ছিল সেগুলো নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
আগামীনিউজ/এএম