Dr. Neem on Daraz
Victory Day

উইঘুর নির্যাতনে মুসলিম দেশগুলো নিশ্চুপ কেন?


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২১, ০৬:৩৪ পিএম
উইঘুর নির্যাতনে মুসলিম দেশগুলো নিশ্চুপ কেন?

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ চীন! ১৪৪ কোটি মানুষের দেশ। ৯৬ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির সবচেয়ে বড় প্রদেশ শিনজিয়াং। শিনজিয়াং চীনের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। আয়তন ১৬ লাখ সাড়ে ৪৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। শিনজিয়াং আয়তনে চীনের প্রায় ছয় ভাগের একভাগ।  প্রদেশটি স্বর্ণ, তেল ও গ্যাসসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এটিই হচ্ছে কাল। শিনজিয়াংয়ের হতভাগ্য নাগরিকদের আমরা উইঘুর মুসলমান হিসেবে জানি। তুর্কি বংশোদ্ভূত এবং তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত এই জাতি উইঘুর ভাষায় কথা বলেন, অনেকটা আরবি ভাষাই বলা যায়। ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, শিনজিয়াংয়ে দেড় কোটি উইঘুর বসবাস করেন।

যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কোনটি? কেউ হয়তো বলবে আরাকানে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের কথা, কেউ বলবে ইহুদি কর্তৃক নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের কথা, কেউ হয়তো বলবে ভারত সরকার কর্তৃক নিপিড়ীত কাস্মীরীদের কথা, কেউ হয়তো বলবে সামাজ্রবাদী কর্তৃক নিপিড়ীত গৃহহারা সিরিয়ানদের কথা, কেউবা বলবে ইয়ামেনের কথা। আর কেউ কেউ হয়তো বলবে উইঘুর মুসলিমদের কথা। পৃথীবির বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতিতত এসব জনগোষ্ঠীর সবাই মুসলিম ধর্মাবলাম্বী। নির্যাতিতি এসকল জনগোষ্ঠী থেকে উইঘুররা একটু বেশিই দুর্ভাগা এই হিসেবে যে, অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর করা নিপীড়নের খবর কিছুটা হলেও বিশ্ব মিডিয়ায় আসে, পৃথীবির লোকজন জানে কিছুটা হলেও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় কিন্তু উইঘুররদের উপর করা নির্যাতনের কোন খবরই বিশ্ব মিডিয়ায় তেমন একটা আসে না আর পৃথিবীর মানুষও সেসব সম্পর্কে খুব একটা জানে না। কারন শিনজিয়াং প্রদেশে সংবাদ মাধ্যম নিষিদ্ধ। তাই এসব অত্যাচারের নির্মমতা মানুষ খুব কমই জানতে পারছে। চীন সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। উইঘুর মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত নীতির ব্যাপারে চীন বলে যে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার মোকাবিলা করার জন্যই তারা নানান পলিসি নিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু দাড়ি রাখা, রমজান মাসে রোজা রাখা কীভাবে ধর্মীয় চরমপন্থা, তা বিশ্ববাসীকে বোঝাতে পারে না। মূলত ধর্মীয় অনুষ্ঠান তাদের মতে চরমপন্থা। আর এই চরমপন্থা দমনের নামে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানা চলছে

১৯৪৯ সালে চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কিছুদিন পর চীনের কমিউনিস্ট সরকার উইঘুরদের বৃহত্তর চীনের সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব জানায়। প্রস্তাব মেনে না নেয়ার পর থেকে শুরু হয় উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতন, নেমে আসে বিভীষিকাময় অত্যাচার। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে উইঘুরদের ধর্ম ও সংস্কৃতির স্থলে কমিউনিজম চাপিয়ে দেওয়ার জন্য চীনা কমিউনিস্টরা উঠে পড়ে লেগে যায়। এর অংশ হিসেবে তাদের ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়। ধর্মীয় প্রার্থনালয় ভেঙে দেয়া হয়। ধর্মীয় কার্যাবলীর উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। চীনাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে যখন উইঘুররা বিদ্রোহ করা শুরু করে তখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহায়তায় হাজার হাজার নিরীহ উইঘুরকে হত্যা করা হয়। একই সাথে অনেককে করা হয় গৃহহীন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে প্রিয়জনদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, সন্তানদের ধরে নিয়ে রাখা হচ্ছে ক্যাম্পে। এরকম ভীতিকর পরিস্থিতির মাঝেই চলছে তাদের জীবন।

শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের নিজস্ব সংস্কৃতি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য চীনের অন্য অঞ্চল থেকে মূল চীনাদের এখানে এনে পুনর্বাসন করা হয়। ফলে ১৯৪৯ সালে শিনজিয়াং এ যেখানে উইঘুর মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ৯৫%, ১৯৮০ সালের মধ্যেই তা ৫৫% এ নেমে আসে। ১৯৮৮ সালে চীনাদের এই দমন পীড়নের হতে মুক্তি লাভ ও চীনের থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য উইঘুররা প্রতিষ্ঠা করেন – পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি। এই সংগঠনের মাধ্যমে তারা কিছু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু চীনা সরকার ১৯৯০ সালে সেখানে পরিকল্পিত ভাবে এক দাঙ্গা পরিচালনা করে। পরে এই দাঙ্গার অভিযোগেই হাজার হাজার উইঘুর যুবককে অন্যায়ভাবে হত্যা করে এবং কারাদণ্ড প্রদান করে চীন সরকার।

চীনের ‘পুনঃশিক্ষাদান' কেন্দ্রগুলোতে (বাস্তবে বন্দিশিবির) ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ এই ক্যাম্পগুলোকে তুলনা করা হয় আধুনিক যুগের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প হিসেবে৷ শুধু বসবাসের অযোগ্য স্থান নয়, উইঘুরদের নিয়মিত নির্যাতন করা হয়৷ যাদেরকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেয়া হয়, পরিবারের ওপর কড়া নজরদারির কারণে তারা বাকি জীবনও বলতে গেলে বন্দি অবস্থাতেই কাটান৷

এ বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোর নিশ্চুপ কেন? 

ইরান চীনা নীতির সমালোচনা করে না৷ ইরান থেকে তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক চীন, ইরানের তেল ও গ্যাস খাতেও চীন প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করে৷ ইরানের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক আরো প্রসারিত করছে দেশটি৷ অর্থনৈতিক কারণে চীনের সঙ্গে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্কও বেশ ভালো৷ যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান চীনা সংখ্যালঘু বিষয়ক নীতির প্রশংসাও করেছেন৷ অন্য আরব দেশগুলোরও অবস্থান একই রকম৷ এক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক একটি বড় কারণ৷

তাছাড়া, অনেক ইসলামী দেশ পরিচালিত হয় অগণতান্ত্রিক সরকার দ্বারা৷ ফলে তাদের প্রায়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলির সমালোচনার মুখে পড়তে হয়৷ মিশর, উপসাগরীয় নানা দেশ, পাকিস্তান, ইরান এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য৷ অন্যদিকে, চীন মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে মোটেই আগ্রহী নয়৷ ফলে চীনের সঙ্গে যে কোনো দেশই একে অপরের অভ্যন্তরীণ নীতি নিয়ে সমালোচনার ভয় না করেই ব্যবসা করতে পারে৷

আগামীনিউজ/এএইচ  

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে