Dr. Neem on Daraz
Victory Day

বর্ষার শুরুতেই চাঁই নিয়ে হৈচৈ


আগামী নিউজ | বিশেষ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২০, ০২:১২ পিএম
বর্ষার শুরুতেই চাঁই নিয়ে হৈচৈ

ঢাকা : বর্ষার আগমনের পর থেকেই এ হৈচৈ শুরু হয় চাঁই নিয়ে। এই বছরও তার ব্যাতিক্রম নয়। পুরো বর্ষাজুড়েই থাকে জেলেদের চৈচৈ (রমরমা অবস্থা)। উপকরণ সংগ্রহ করা, চাঁই তৈরি করা, বিলে চাঁই পাতা, মাছ ধরা শুরু হয় এই সময়ে।

এ প্রক্রিয়া গুলো অনেক মাছ শিকারীরা নিজেরাই করে থাকেন। আবার কেউ কেউ অন্যকে দিয়ে চাঁই তৈরি করেন। আবার কেউ হাট থেকে তৈরিকৃত চাঁই কিনে এনে মাছ শিকার করেন।

রূপগঞ্জ উপজেলার খামারপাড়া এলাকার মোতলেব মিয়া বলেন, চাঁই দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা। আমি নিজে চাঁই বানিয়ে মাছ শিকার করি। এটা অনেক আনন্দের। একটা চাঁই তৈরি করতে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। তারপরও নিজে মাছ শিকার করে খাওয়ার মজাই অন্যরকম। নিজের চাহিদা মিটিয়ে আবার বাড়তি মাছ বিক্রি করে সংসারের জন্য বাড়তি কিছু উপাজর্নও করা যায়।

মাছ শিকারী মতিন মিয়া বলেন, আমি ২০ থেকে ৩০টা চাই দিয়ে মাছ ধরি। এতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মাছ পাই। নিজে খাই। আত্বীয়-স্বজনদের দেই। বাড়তি মাছ বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। ভালোই আয় হয় এতে। সংসারেরও উপকারে আসে, মন্দ নয়।

উপজেলার কায়েতপাড়া হাটের এক কোণে বসে আপন মনে চাঁই বুনে যাচ্ছেন খালেক মিয়া। প্রতিদিন এক জায়গায় তিনি থাকেন না। বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে তাৎক্ষণিক অর্ডার নিয়ে চাঁই তৈরি করে দিচ্ছেন তিনি। চাঁইয়ের ধরনভেদে মূল্যও হরেক রকম হয়ে থাকে। তার কাছে সর্বনিম্ন ২৫০ টাকার চাঁই থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা মূল্যের চাঁইও পাওয়া যায়।

খালেক মিয়া বলেন, বর্ষার পানি আসছে। জোয়ারের পানির সাথে নতুন মাছ ধরার জন্য জেলেরা চাঁই বানানোর অর্ডার দিচ্ছে। কেউ ছোট আবার কেউ বড় চাঁই বানানোর অর্ডার দিচ্ছেন। তবে মাঝারি সাইজের চাঁইয়ের চাহিদাই বেশি।

উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কাজীবাড়ি এলাকার আবুল হোসেন বলেন, বছরের এ সময়টাতে চাঁই দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা। জমির আইল কেটে চাঁই বসিয়ে দিলেই নতুন পানির সাথে ভেসে আসা মাছগুলো চাঁইয়ে আটকা পড়ে যায়। এছাড়া নদীর তীরে বাঁশের খুঁটির সাথে চাঁই বেঁধে রাখলে সকালে বাইম, বড় বড় চিংড়ি, কৈ, শিংসহ বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায়।

চাঁইয়ের মাধ্যমে নতুন পানির মাছ খাওয়ার মজা অনেক। গ্রামের খাল-বিলে মাছ ধরার পুরনো উপকরণের একটি হচ্ছে চাঁই। বর্ষার আগমনে নানা প্রজাতির দেশি জাতের ছোট মাছ ও পোনার বিচরণ বাড়ছে। চিংড়ি ও দেশি মিঠা পানির ছোট মাছ ও পোনা ধরার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের তৈরি বিশেষ ফাঁদ। মাছ ধরার এ ফাঁদের পরিচিতি ‘চাঁই’ নামে। এই চাঁই বুনে বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ সচ্ছল জীবনযাপন করছেন।

গ্রীষ্মের শুরু থেকে এ অঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় শুরু হয় চাঁই দিয়ে মাছ ধরা। বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ দিয়ে নদী-খালে, বিলে ৪-৫ ফিট ফাঁকে ফাঁকে বসানো হয় একটি করে চাঁই। পানিতে চাঁই বসানো হয় মূলত চিংড়ি মাছ শিকারের জন্য। কিন্তু ধরা পড়ে পুঁটি, বেলে, টেংরাসহ সব প্রকারের ছোট মাছ। চাঁইগুলো প্রতি সপ্তাহে বিক্রি হয় উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। উপজেলার চাহিদা পূরণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় এসব চাঁই। উপজেলার কায়েতপাড়া এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাঁই তৈরি হচ্ছে।

চাঁই তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে বাঁশ। এই বাঁশগুলো উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। একটি বাঁশে ৬টি চাঁই হয়। প্রতি ১০০টি চাঁই বানাতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। শ্রমিকরা প্যাকেজ আকারে চাঁই বানানোর কাজ করে। মাপমতো বাঁশ কাটা, শলা তোলা, শলা চাঁছা, সুতা দিয়ে খোল বাঁধা, চটা বাঁধা, মুখ বাঁধা চুক্তিভিত্তিতে করে থাকেন। এতে প্রতি শ্রমিক গড়ে দৈনিক আয় করেন ৩০০ টাকা।

গ্রীষ্মের শুরু থেকে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়, যা চলতে থাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে মাছ ধরার এই উপকরণটির বাজারজাত ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

আগামীনিউজ/ এসপি

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে