Dr. Neem on Daraz
Victory Day

প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ ঘোষণায় স্বস্তি: বাস্তবায়নে দরকার সুশাসন নিশ্চিত করা


আগামী নিউজ | ম.শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২০, ০১:২৮ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ ঘোষণায় স্বস্তি: বাস্তবায়নে দরকার সুশাসন নিশ্চিত করা

করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্যাকেজ ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।    
ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন বিএনপি,জামায়াত, জাতীয় পার্টি, জাসদ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি সংগঠন এই প্যাকেজ ঘোষণায় সাধুবাদ জানায়।
তবে তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন যে, দেশে কল্যাণমূখী কর্মসূচি বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দেয়। তাই দ্রুত সময়ে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবিও জানান।

বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল বলেছেন ,'সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম, অনুদান দিতে হবে। আমরা বলেছি, ভাতা বাড়াতে, চিকিৎসক-নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা দিতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। শুধু ঋণ নয়, অনুদান, ভাতা, বেতন বাড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি, সেগুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেভাবে কথা বলেননি। ‘দিন আনে দিন খায়’ এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, 'ব্যাংক ঋণ দেওয়ার সময় নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন সুশাসন না থাকার কারণে যার ঋণ পাওয়ার কথা সে পাচ্ছে না। অথবা যে সময়ে পাওয়ার প্রয়োজন সে সময়ে পাচ্ছে না। তাই ব্যাংকগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে'।

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, 'আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজকে স্বাগত জানাই। প্যাকেজের প্রণোদনা রফতানি খাতের পাশাপাশি উৎপাদনমুখী ও সেবা খাতে ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের শিল্প কারখানার জন্য সহায়ক হবে । '

দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক ড.এম এ হাকিম প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,'' রপ্তানীমুখী গার্মেন্টস শিল্পের কর্মীদের বেতনের জন্য প্রণোদনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে । কিন্তু দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য নির্ধারিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক এখনো বেতন ভাতা না পাওয়ায় অচিরেই সমস্যাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ব্যাংকগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন।

'' তিনি আরো উল্লেখ করেন, গার্মেন্টস মালিকরা বড় ব্যবসায়ী। তাদের ২/৪ বা ৬মাস সমস্যা হওয়ার কথা নয় । কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেশীয় শিল্পের উৎপাদন বন্ধ থাকায় এসব মালিক খুবই সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন এবং কর্মচারীদের বেতনভাতাও দিতে পারছেন না”।  

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে সরকার সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, দেশকে মহা দূর্যোগ থেকে বাঁচাতে প্যাকেজ বাস্তবায়নে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানদের স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা গেলে কোন মানুষকে কষ্টে দিনপাত করতে হবেনা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সমাজের সামর্থবানরা এগিয়ে আসেন তবে, এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।

দেশের এ মহা সংকটকালে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিটি এলাকার এমপি চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনারদের নিয়ে কমিটি গঠন করে এই তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রতিটা ইউনিয়নে একটা ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি থাকবে। যারা ভিজিএফ, ভিজিডি পাচ্ছেন তাদের জন্য এই কমিটি না। তাদের তো তালিকা আছেই। সবাই মিলে এই তালিকা এমনভাবে করতে হবে যেন সত্যিকার যার অভাব রয়েছে, কষ্ট পাচ্ছে তাদের তালিকা যেন হয়। তাদের কাছে যেন সাহায্যটা পৌঁছায়।

জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের আমরা সামাজিক নিরাপত্তায় সাহায্য দিচ্ছি, তাদের বাইরের যে শ্রেণিটা হাত পাততেও পারছে না, তাদের তালিকা করে, তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া, এই কাজটা আপনারা করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনাকে যৌক্তিক হিসেবে দেখছেন সবাই। বিশেষ করে দিনমজুর ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর কেউ যাতে কষ্টে না থাকে, সেই জন্য স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতার সাথে তালিকা প্রস্তুত করে কাজটি করলে কোন মানুষ কষ্ট পাবেনা।

ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাহেল হোসেন আগামীনিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ খুবই উপযোগী। তবে, যাদের দ্বারা কাজটি করানো হবে তারা যেন সততা ও নিষ্ঠার সহিত কাজটি করেন। জেলায় যারা আছেন যারা বিষয়টা দেখভাল করবেন। তারা যেন জনগণের তাড়নাটা বুঝতে পারেন। বিশেষকরে, যেসব মানুষ কষ্টে আছে, যারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতেছে না।

যারা দিন আনে দিন খায়। তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের জন্য ১০ টাকা কেজির চাল ও বিনামূল্যে খাদ্য সাহায্য অব্যাহত রাখা । এজন্য সরকার যেন ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সঠিকভাবে ব্যাবহার করে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

এই কার্যক্রম কে সঠিক ভাবে করতে হলে, আমাদের সবাইরে সবার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কনফারেন্সে স্থানীয় প্রশাসনকে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেছেন সরকারের সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়। তিনি আগামীনিউজকে বলেন,  করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তগুলোই আমাদের ভরসা। করোনা মেকাবেলায় সরকার সকলকে ঘরে আবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন ফলে দেশের ৩ কোটি পরিবারই গৃহবন্দী।

ধারণা করা যায় উচ্চ বিত্ত ও মধ্যবিত্ত ২ কোটি পরিবার কম-বেশি মাসাধিক কাল নিজ খরচে চলতে পারবে। কিন্তু  প্রায় ১ কোটি অতি দরিদ্র পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে।গৃহবন্দী এসকল মানুষের মধ্যে একজনও যাতে ত্রান বা সরকারী সহায়তা থেকে বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে দক্ষ হাতে কাজ করতে হবে।

সরকারী সহায়তায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ:
উঠে  উল্লেখ করে তিনি বলেন,  আমাদের হাতে   সামাজিক নিরাপত্তা সেবাগ্রহীতার তালিকা ব্যতীত সকল খেটে খাওয়া মানুষের রেডিমেড কোন তালিকা নেই। তালিকার জন্য আমরা সবসময়ই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নির্ভর করি। সেখানে কম-বেশি অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে।

সরকারী সুযোগ-সুবিধা থেকে  সাধারণ মানুষের বঞ্চনার সূত্রপাত হয় টাউট বাটপাড়দের মাধ্যমে উল্লেখ করে সাবেক সচিব আরো বলেন, তালিকা প্রণয়নে গ্রাম ভিত্তিক সরেজমিন যাচাই-বাছাই করাই উত্তম। আশার্ কথা ত্রান বিতরণ সরাসরি প্রশাসন ও সেনাবাহিনী করবে বিধায় তেমন অনিয়ম করার সুযোগ থাকবে না। বিভিন্ন সময়ে সরকারকে অনুরূপ জনগণের তথ্য পেতে কষ্ট পেতে হয় আর তখন্ই সমাজের টাউট বাটপাররা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।


স্মার্ট কার্ডকে শক্তিশালী ডাটাবেজ মনে করে সাবেক সচিব বলেন, এ প্রসংগে একটা কথা মনে রাখা দরকার।স্মার্ট কার্ডকে শক্তিশালী করে অর্থ-বিত্ত ও জীবিকার তথ্য সন্নিবেশ করে আর্থসামাজিক শ্রেনীবিন্যাসসহ অনলাইন ডাটাবেজ তৈরী করলে খুব সহজেই যে কোন প্রয়োজনে সরকার তা তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। আশা করি ভবিষ্যতে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করার  মধ্যদিয়ে একদিকে যেমন সঠিক তালিকা পাওয়া যাবে সেবাও তত সহত  হবে।

তবে, সবাই মনে করেন, দেশের একটি মানুষও যেন কষ্ট না পায় এজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সততা ও নিষ্ঠার সহিত কাজ করতে হবে। আর, এখান থেকেই শুরু হবে নতুন বাংলাদেশ।

আগামীনিউজ/ ইমরান /ডলি/বিজয়
 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে